রাঁচির রাস্তায় গোলাপি অটোরিকশা। শুক্রবার পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
ওঁরা অটোচালক!
কিন্তু মুখে অশ্রাব্য গালিগালাজ নেই। যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য ব্যবহার নেই। ট্রাফিক আইন ভাঙার বালাই নেই। মহিলাদের জন্য ওঁদের মুখে ‘মাইজি’ কিংবা ‘বহেনজি’ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই। আসলে ওঁরাও যে মহিলা।
রাঁচি শহরের মেন রোড, স্টেশন রোড কিংবা ডোরান্ডার মতো জনবহুল রাস্তায় একটু দাঁড়ালেই ওঁদের দেখা মিলবে। পরনে গোলাপি সালোয়ার-কামিজ, সিঁথিতে সিঁদুর। আর শাঁখা-পলা পরা হাতে ধরা স্টিয়ারিং। ওঁরা ‘পিঙ্ক অটো’-র চালক বা চালিকা। গত কাল থেকে মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাঁচি শহরে চালু হয়েছে এই পিঙ্ক অটো।
পুলিশ নিজেই এই অটোচালকদের উৎসাহ দিচ্ছে। শহরে এই ধরনের অটোর সংখ্যা আরও বেশি করে বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করছে। যাত্রীদের তো বটেই, চালকদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা পুলিশই করবে বলে জানিয়েছেন রাঁচির এসএসপি প্রভাত কুমার। গত কাল তিনিই ওই মহিলা চালিত অটো পরিষেবার উদ্বোধন করেন। তবে এই পিঙ্ক অটো শুধু মহিলা যাত্রীদের জন্যই। পুরুষরাও ওই অটোয় চড়তে পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে সঙ্গে পরিবারের মহিলাদের থাকাটা বাধ্যতামূলক।
রাঁচি-সহ ঝাড়খণ্ডের অনেক জায়গাতেই যানবাহনের ভিতরে মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ প্রচুর। সে কথা স্বীকার করে নিয়েই এসএসপি জানান, সব অভিযোগ থানা পর্যন্ত আসেও না। তাঁর কথায়, “অনেক সময় অটোচালকরা বাড়তি যাত্রী তুলে অটোর ভিতরে মহিলাদের অসুবিধার মধ্যে ফেলেন। সে সব থেকে মহিলাদের রেহাই দিতেই শহরে গোলাপি অটো চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
অটোচালকদের সুবিধার্থে তাঁদের ফোন নম্বরও যেমন পুলিশের কাছে থাকবে, তেমনই পুলিশ কর্তাদের নম্বরও অটোচালকদের দেওয়া হয়েছে। কোনও সমস্যা হলেই মহিলা অটোচালকরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
পিঙ্ক অটো মহিলা সার্ভিসের সভাপতি লালমুনী দেবী এক মাস হল অটো চালাচ্ছেন রাঁচির রাস্তায়। আগে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে উপার্জন করতেন। তাঁর চার সন্তানই স্কুলে পড়ে। লালমুনীর কথায়, “একটি বেসরকারি সংস্থা আর পুলিশের যৌথ প্রয়াসে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। এখানে মহিলাদের অটো চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত পিঙ্ক অটোর লাইসেন্স আর রুট পারমিটের ব্যবস্থা করতেও উদ্যোগী হয়েছে রাঁচি পুলিশ। আর আয় বেড়েছে আমাদের।” সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার প্রধান সঞ্জয় সাহুর কথায়, “এক বছর আগে অশোকনগরে একটা অটো স্ট্যান্ড তৈরির টেন্ডার পেয়েছিলাম। তখনই পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মহিলাদের জন্য অটো সার্ভিস শুরু করার পরিকল্পনা করি। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে গোলাপি অটো চালানো শুরু হয়। এক বছরের মধ্যে এই পরিষেবা মহিলাদের কাছে এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে এক সঙ্গে ত্রিশটি অটো গত কাল পথে নামানো হয়েছে।” তাঁর মতে, এর ফলে মহিলা যাত্রীদের যেমন সুবিধে হয়েছে, তেমনই অটো চালিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন মহিলারাও।
রাঁচি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানাচ্ছে, অটো পিছু কমবেশি পাঁচ জন মহিলা বসছেন। প্রতিটি অটো দিনে গড়ে সাত থেকে আটটি করে ‘ট্রিপ’ খাটছে। আপাতত মহিলাদের স্বার্থেই রাত আটটার পরে আর পিঙ্ক অটো চলার অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ। পরবর্তী ক্ষেত্রে সময় বাড়ানোর কথা বিবেচনা করা হবে।
আজ সকালে রাঁচি স্টেশনে দেখা গেল দু-তিন জন মহিলা পুরুষ অটোচালকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যাত্রী ডাকছেন। রাঁচির রাস্তায় এতদিন পুরুষ অটো চালকদেরই একচেটিয়া রাজত্ব ছিল। এ বার তাঁদের একাধিপত্য ভাঙতে জোরালো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ‘পিঙ্ক অটো’।