ত্রয়ী: সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। বৃহস্পতিবার। রয়টার্স
২০২২-এর পর এ বার ২০৪৭।
নরেন্দ্র মোদীর প্রথম জমানায় বলা হচ্ছিল ২০২২ সালের কথা। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে হরেক স্বপ্নপূরণের প্রতিশ্রুতি। যা কি না চলতি বছরে হয়ে যাওয়া লোকসভার পরেও আরও তিন বছর। আর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার মাধ্যমে সরকার শোনাল ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার একশো বছরের প্রতিশ্রুতির কথা। যা এখন থেকে আরও ২৮ বছর পরের বিষয়।
কিন্তু তিনশো পার করে আরও ক্ষমতা নিয়ে ফেরার পরে মোদী যে পুরনো ক্ষতগুলি মেরামত করে নিজের দাপট আরও বিস্তার করতে চাইছেন, সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বক্তৃতাতেই তা ফুটে উঠল। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজ্যসভায় চন্দ্রবাবু নায়ডুর দলের ছ’জনের মধ্যে চার জনকে যে ভাবে বিজেপিতে নিয়ে আসা হল, দিল্লির অলিন্দে এখন একটি রসিকতা ঘুরতে শুরু করেছে— ‘‘গত কাল পর্যন্ত মোদী ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর কথা বলেছেন। আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও সরকার ফের তা বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে হতে চলেছে ‘এক দেশ, এক দল, এক নেতা’।’’
যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা তৈরি করে সরকারই। সেখানে আজ পরতে পরতে মোদীর রাজনীতির মন্ত্রই গুঁজে দেওয়া হল। মোদীর প্রথম জমানায় মোদী যাঁদের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি, তাঁদেরও কাছে টানার বার্তা থাকল সেখানে। রাষ্ট্রপতি সাফ বললেন, ‘এ ভোটে জনমত স্পষ্ট। ২০১৪ সালের আগে দেশের হতাশা, অস্থিরতা থেকে বেরোতে চাওয়া মানুষ আমার সরকারের উপর ভরসা রেখেছেন। প্রথম বারের থেকে সমর্থন দ্বিতীয় বারে আরও জোরাল হয়েছে। সেই উন্নয়নকেই তাঁরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।’
লক্ষ্য ২০২২
• কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে
• সব গরিবের জন্য পাকা বাড়ি
• সব গরিবের জন্য নির্মল জ্বালানি
• সব গরিবের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ
• সব গরিবের জন্য শৌচালয়
• সব গরিবের জন্য চিকিৎসা
• সড়কে যুক্ত সব গ্রাম
• দূষণমুক্ত গঙ্গার অবাধ প্রবাহ
• দেশীয় প্রযুক্তিতে মহাকাশযাত্রা
সংখ্যালঘুদের মন জয়ে বার বার বলা হল ‘সর্বসমাবেশী ভারত’, ‘সকলের বিশ্বাস’ অর্জনের কথা। সে প্রসঙ্গেই উঠল তিন তালাক, মহিলাদের সম্মান, যুবকদের কাছে টানার মন্ত্র। অম্বেডকর থেকে গাঁধীর কথা তুলে উচ্চারিত হল গরিব কল্যাণের প্রতিশ্রুতি। আর এ সবের মধ্যে যে জাতীয়তাবাদের তাস ভোটের আগে সব থেকে বেশি শক্তি দিয়েছে মোদীকে, সেটিও বার বার বলা হল ঢাক পিটিয়ে। দু’টি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা— সব কৃতিত্বই গেল মোদীর ঝুলিতে। রাহুল গাঁধী হাত গুটিয়ে থাকলেও বিজেপির সাংসদদের সঙ্গে টেবিল চাপড়াতে দেখা গেল সনিয়া গাঁধীকেও।