পুলিশ লাঠি চালানোর পরে। শিলচরে জেলাশাসকের দফতরের সামনে। সোমবার। স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতির প্রতিবাদে শিলচরে বামেদের আইন অমান্য আন্দোলনে লাঠি চালাল পুলিশ। অভিযোগ, ২০ জন বিক্ষোভকারী তাতে জখম হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েক জন মহিলাও। পাশাপাশি, শ’দুয়েক বামকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
মূল্যবৃদ্ধি রোধ, গণবণ্টন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, খাদ্য সুরক্ষা আইন লাগু, জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া বন্ধ করা, ভূমিহীনদের জমি বণ্টন, কৃষকের দখলে থাকা জমির পাট্টাদান, এনরেগা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করা, রাজ্যের বন্যা ও নদী-ভাঙনকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে ঘোষণার দাবিতে বামেরা আজ আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয়। সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই(এমএল), ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এবং এসইউসিআই(সি)— ছ’টি বামদলের নেতা-কর্মীরা নরসিংটোলা ময়দানে জমায়েত হন। সেখান থেকে মিছিল করে জেলাশাসকের অফিসের সামনে আসেন। পুলিশ আগে থেকেই অফিসপাড়ায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। জেলাশাসকের অফিসের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পুলিশের বক্তব্য, মিছিলের লোকজন ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে লাঠি চালাতে হয়। আন্দোলনকারীরা সেই সময়ছত্রভঙ্গ হলেও মুহূর্তে জোট বেঁধে পুলিশের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছোঁড়ে। ততক্ষণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষিনী শঙ্করন, ডিএসপি সুধাংশুকুমার দাস ঘটনাস্থলে চলে আসেন। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। পুলিশকর্তারা জানিয়ে দেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠি চালাতে হয়। তাঁরা দুঃখপ্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। জেলা প্রশাসন জমায়েতকে বেআইনি ঘোষণা করলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে।
সিপিএম নেতা চূণীলাল ভট্টাচার্য, সুপ্রিয় ভট্টাচার্য, দুলাল মিত্র, তাপস ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের রফিক আহমেদ, সিপিআইএমএল-এর হায়দর হোসেন চৌধুরী, এসইউসিআইসি-র প্রদীপকুমার দেব, শ্যামদেও কুর্মী, ফরওয়ার্ড ব্লকের মিহির নন্দীরা অভিযোগ তোলেন, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ অহেতুক লাঠি চালিয়েছে। তাঁরা কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। বলেন— ‘সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার উপর নতুন নতুন আক্রমণ আনা হচ্ছে। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি হিমঘরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বাজেটে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত। কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে সার্ভিস ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের কংগ্রেস সরকারও দুর্নীতিতে লিপ্ত। কৃষকদের দাবি উপেক্ষিতই থাকছে।
কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতির প্রতিবাদে করিমগঞ্জেও বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের একটি দফতরের প্রবেশপথ আটকাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়। আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন করিমগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীন সিংহ। আন্দোলনকারীরা জানান, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এক বছর কেটে গিয়েছে। পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার যে ভাবে উদার অর্থনীতিতে দেশের মানুষের সমস্যা বাড়িয়েছিল, সেই একই রাস্তায় এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রমশ বাড়ছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা, সুসংহত শিশু কল্যাণ, মিড ডে মিল, কৃষিখণ্ড পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি খরচ অনেক কমানো হয়েছে। এতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এ দিনের আন্দোলনে সিপিআই, সিপিআই (এম), এসইউসিআই (সি), সিপিআই (এমএল), আরএসপি ও সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীরা সামিল ছিলেন।