প্রতীকী ছবি।
রাজ্যসভা নির্বাচন ঘিরে সরগরম উত্তরপ্রদেশ। বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ক্রস ভোটিং করলেন মায়াবতীর দল বসপার বিধায়ক অনিলকুমার সিংহ। এক কংগ্রেস বিধায়কও ক্রস ভোটিং করেছেন বলে বিজেপির দাবি। তবে সেই কংগ্রেস বিধায়ক নিজে সে কথা অস্বীকার করেছেন।
মোট ৫৯টি আসনের জন্য নির্বাচন ঘোষিত হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষিত হয়েছেন ইতিমধ্যেই। ২৬টি আসনের জন্য শুক্রবার ভোট নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশে রয়েছে ১০টি আসন, পশ্চিমবঙ্গে ৫টি, কর্নাটকে ৪টি, তেলঙ্গানায় ৩টি, ঝাড়খণ্ডে ২টি, ছত্তীসগঢ়ে এবং কেরলে একটি করে আসন রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের লড়াইটাই সবচেয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে সকাল থেকে।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় আসনসংখ্যার নিরিখে ১০টি রাজ্যসভা আসনের মধ্যে ৮টিতেই বিজেপির জয় নিশ্চিত। কারণ, এক জন প্রার্থীকে জেতানোর জন্য ৩৭ জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র হাতে রয়েছে ৩২৪ জন বিধায়ক। ৮ জন প্রার্থীকে জিতিয়েও ২৮টি ভোট অতিরিক্ত থাকছে এনডিএ-র হাতে। সেই ভোট পাচ্ছেন বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী।
সমাজবাদী পার্টি (সপা) একটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। সপা প্রার্থী জয়া বচ্চন সহজেই জিতবেন, কারণ সপার বিধায়ক সংখ্যা ৪৭। জয়াকে ৩৭টি ভোট দেওয়ার পরে যে অতিরিক্ত ১০টি ভোট থাকবে, তা বহুজন সমাজ পার্টির (বসপা) ভীমরাও অম্বেডকরকে দেবে সপা। কংগ্রেসের ৭ বিধায়ক এবং রাষ্ট্রীয় লোক দলের (আরএলডি) এক জন বিধায়কও বসপা প্রার্থীকে ভোট দেবেন। বসপার নিজের ১৯, সপার ১০ এবং কংগ্রেসের ৭ এবং আরএলডি-র ১টি ভোট মিলিয়ে ভীমরাও অম্বেডকর ৩৭টি ভোট পাবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হতেই ছবিটা কিছুটা বদলে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে।
জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসছেন উত্তরপ্রদেশে যোগী মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শ্রীকান্ত শর্মা ও সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ছবি: পিটিআই।
উন্নাও পূর্বের বসপা বিধায়ক অনিলকুমার সিংহ ভোট দিয়ে বেরিয়েই জানিয়ে দেন, তিনি নিজেদের দলের প্রার্থীকে ভোট দেননি। তিনি বিজেপি সমর্থিক নির্দল প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। অনিলকুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘আমি মহারাজজির (যোগী) সঙ্গে রয়েছি।’’
গত রাতে মায়াবতী দলীয় বিধায়কদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অনিলকুমার সিংহ সেখানে গিয়েওছিলেন। কিন্তু নৈশভোজ সেরে বেরিয়েই তিনি চলে যান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে। বেগতিক বুঝে অনিলকুমার সিংহের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বসপা নেতৃত্ব। তবে লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন: মমতার সঙ্গেও কথা চান রাহুল
নির্দল বিধায়ক রঘুরাজপ্রতাপ সিংহ ওরফে রাজা ভাইয়াকেও সম্প্রতি কাছে টেনেছেন অখিলেশ যাদব। আজকের নির্বাচনে রাজা ভাইয়া মায়াবতীর প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সকাল থেকে তিনিও বেসুরে গাইতে শুরু করেন। ‘‘আমি অখিলেশ যাদবের সঙ্গে রয়েছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি মায়াবতীর প্রার্থীকে ভোট দেব।’’ বলেছেন রাজা ভাইয়া। ভোট দিয়ে বেরনোর পরে রাজা ভাইয়াও আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করেন। ফলে তাঁর ভোট কোন দিকে গিয়েছে, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
রাজ্যসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক দল। ছবি: পিটিআই।
কর্নাটকেও স্নায়ুর লড়াই জমজমাট। ৪টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে কর্নাটকে। এক জন প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার জন্য ৪৬টি ভোট দরকার। কংগ্রেসের বিধায়ক ১২৪ জন। অর্থাৎ ২ জন প্রার্থী সহজেই জিতবেন। তার পরেও ৩২টি ভোট অতিরিক্ত থাকবে। কংগ্রেসের তৃতীয় প্রার্থীই সেই ৩২টি ভোট পাবেন। কিন্তু তাতে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পৌঁছনো যাচ্ছিল না। তাই জেডি(এস) বিধায়কদের ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে কংগ্রেস।
সকাল থেকেই কর্নাটকে উত্তেজনা ছিল চরমে। ক্রস ভোটিং এবং কংগ্রেসের প্রতি রিটার্নি অফিসারের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে হইচই জুড়ে দেয় জেডি(এস)। পরে রিটার্নিং অফিসার বদলে দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু জেডি(এস) শেষ পর্যন্ত ভোট বয়কটের রাস্তায় হেঁটেছে।
কর্নাটকে বিজেপি-র বিধায়ক ৪৪ জন। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে কম। কিন্তু প্রদেশ বিজেপি-র সভাপতি ইয়েদুরাপ্পা দাবি করেছেন, অন্তত ৫০টি ভোট পাবেন বিজেপি প্রার্থী রাজীব চন্দ্রশেখর।
আরও পড়ুন: লোকপালের দাবিতে ফের আমরণ অনশনে অণ্ণা
পশ্চিমবঙ্গে ৫টি আসনের জন্য ৬ জন প্রার্থী লড়ছেন। ৪টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী নাদিমুল হক, আবিররঞ্জন বিশ্বাস, শুভাশিস চক্রবর্তী এবং শান্তু সেনের জয় নিশ্চিত। পঞ্চম আসনে লড়াই কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং বামফ্রন্টের রবীন দেবের মধ্যে। তৃণমূল তার অতিরিক্ত ভোট কংগ্রেসকে দিচ্ছে। ফলে সিঙ্ঘভির জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।