ফাইল চিত্র।
বুধবার রাজ্যসভায় গোলমালে অভিযুক্তদের কী ধরনের শাস্তি দেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। অতীতে লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সাংসদদের শাস্তির বিষয়ে এমন একটি কমিটি গড়েছিলেন। সেই ধরনের একটি কমিটি গড়ার বিষয় খতিয়ে দেখছে রাজ্যসভার সচিবালয়।
রাজ্যসভার বুধবার বিমা বেসরকারিকরণ বিল পাশের সময়ে গোলমালে অভিযুক্ত বিরোধী সাংসদদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পক্ষে সরকার। গত কাল কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আট কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক যোগে দোষীদের শাস্তি চেয়ে সরব হন। এই পরিস্থিতিতে দোষীদের কী শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার কথা বিবেচনা করছে রাজ্যসভার সচিবালয়। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতামতও চাওয়া হয়েছে। বুধবারের ঘটনা নিয়ে আজ ফের মুখ খুলেছেন নায়ডু। তিনি বলেন, “রাজ্যসভার টেবিল রাজনৈতিক যুদ্ধের জায়গা নয়। সংসদ আলোচনা ও বিতর্কের জায়গা।” পাল্টা বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার গোড়া থেকেই আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল। তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্য দোলা সেন বলেন, “১৯ দিনে ৩৮টি বিল পাশ হয়েছে। প্রতি
বিলে সময় ব্যয় হয়েছে ৭-১০ মিনিট। ওবিসি বিল ছাড়া আলোচনা কোথায় করেছে সরকার!”
বিমা বেসরকারিকরণ-সহ একাধিক বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। সরকার একটি বিলকেও সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর প্রয়োজন বোধ করেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এ প্রসঙ্গে বেঙ্কাইয়া বলেন, “বিল সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সরকারের হাতে থাকে। মতপার্থক্য হলে রাজ্যসভা সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে চেয়ারম্যানের ভূমিকা থাকে না।”
বেঙ্কাইয়ার কথায়, চেয়ারম্যানের চেয়ার নিরপেক্ষ। তাঁর কাছে শাসক ও বিরোধী শিবির দুই চোখ। দু’টি চোখই তাঁর কাছে সমগুরুত্বের। তবেই সঠিক ছবিটি পাওয়া সম্ভব হয়। পাল্টা আক্রমণে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেন, লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের ভূমিকা আদৌ নিরপেক্ষ নয়। শেষ দিনে যে ভাবে বলপ্রয়োগ করে বিমা বিল পাশ করানো হয়েছে, তাতে সংসদের গরিমা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নাম না-নিয়ে তিনি বলেন, “সম্ভব হলে ওই দুই ভদ্রলোক সংসদই লকডাউন করে দিতেন!”
বুধবার বিমা বিল পাশের সময়ে হওয়া হাঙ্গামা নিয়ে গত কাল রিপোর্ট জমা দিয়েছিল রাজ্যসভার সচিবালয়। যাতে একাধিক সাংসদদের মধ্যে সিপিএমের এলামরাম করিমের বিরুদ্ধে এক মার্শালের গলা চেপে ধরার অভিযোগ আনা হয়। এই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ঘটনার প্রকৃত তদন্তের জন্য নায়ডুর কাছে আবেদন জানিয়েছেন করিম। তাঁর দাবি, “বিক্ষোভরত সাংসদদের শারীরিক নিগ্রহ করতেই মার্শালদের ডাকা হয়েছিল।” সে দিন মারমুখী মার্শালদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন করিম। ওই রিপোর্টে নাম রয়েছে তৃণমূলের দোলা সেন ও অর্পিতা ঘোষের। দোলার বিরুদ্ধে ফাঁসির দড়ি দেখানোর যে অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেটা ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুদিন ছিল। তাই ফাঁসির দড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছি— কারা এক সময়ে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে, আর আজ কারা ক্ষমতায় এসে বিমা, প্রতিরক্ষা, এয়ার ইন্ডিয়া-সহ দেশের সব ক্ষেত্রকে বিদেশিদের কাছে বেচে দিচ্ছে।” অর্পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে কাগজ ছিঁড়ে টেবিলের দিকে ছুড়ে দেওয়ার।