রাজনাথ সিংহ ও অজিত ডোভাল।
চার বছরে এই প্রথম!
মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক গোপন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই রীতিমতো ফোঁস করে উঠলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে এই প্রথম সুর চড়ালেন তিনি। আর রাজনাথ ফোঁসটি করলেন যাঁর উদ্দেশে, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনি আবার একই সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবার এবং মোদী— দু’জনেরই প্রবল আস্থাভাজন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ডোভাল জানান, রমজানের সময় কাশ্মীরে সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই রাজনাথ পাল্টা বলেন, ওই সিদ্ধান্ত মোটেও ভুল হয়নি। বরং এখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার পরেও সংঘর্ষবিরতির মেয়াদ বাড়ানো উচিত।
জম্মু-কাশ্মীরে মেহবুবা সরকারের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরে পরিস্থিতির ময়না-তদন্তই ছিল ওই বৈঠকের উপজীব্য। কাশ্মীর ব্যর্থতার দায় এখন রাজনাথের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ডোভালরা। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, রাজনাথকে জানিয়েই সব করা হয়েছে। এখন
দায় এড়াচ্ছেন মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক ২ নম্বর।
গোপন বৈঠকে রাজনাথ যা বলেছেন, তা হল (১) কাশ্মীর নীতি নিয়ে ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। (২) রমজানের সময় একতরফা সংঘর্ষবিরতি একা রাজনাথের সিদ্ধান্ত নয়। সরকার যৌথ ভাবে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমনকি লস্কর সংঘর্ষবিরতি অমান্য করলেও কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেনি, তা কি রাজনাথের কথায়? (৩) কাশ্মীরে সংঘর্ষবিরতি প্রত্যাহার করা হলেও পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। এক জন জঙ্গি মরলেও হাজারো মানুষ পথে নামছেন। এই অবস্থায় সংঘর্ষবিরতি বজায় রেখে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া চালু রাখা উচিত। তাতে কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা কমতে পারে।
ঘটনা হল, রাজনাথ সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হলেও এখন ডোভালের মতবাদই সঙ্ঘের বেশি পছন্দের। রাজনাথ এখন হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে। তাঁর উদ্যোগেই প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধানকে মধ্যস্থতাকারী করে উপত্যকায় পাঠানো হয়েছিল। রাজনাথ হুরিয়ত নেতাদের দিয়ে একটি যৌথ বিবৃতিও জারি করাতে চান। কিন্তু হুরিয়ত নেতারা ছত্রভঙ্গ। প্রবীণ গিলানি অসুস্থ, গৃহবন্দি। ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী পাকিস্তানে ভোট লড়ছেন, তাই ইয়াসিন পুরোপুরি পাকপন্থী। অন্য হুরিয়ত নেতাদের বক্তব্য, বাহিনীর সন্ত্রাস না থামলে তাঁদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া অসুবিধাজনক।
আরও পড়ুন: সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে রাজনৈতিক অস্ত্র করেছে বিজেপি, তোপ কংগ্রেসের
বিজেপির কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত নেতা রাম মাধব রাজনাথের সঙ্গে দেখা করেছেন। রাজনাথের প্রচেষ্টাকে সঙ্ঘ পরিবার যে খুব ভাল চোখে দেখছে, তা নয়। ডোভাল এবং অমিত শাহ চাইছেন ভোটের আগে আরও উগ্র পাক বিরোধিতার লাইন নিতে। জঙ্গিদমন অভিযান তীব্রতর করতে। রাজনাথ মনে করেন, শুধু ডান্ডা দিয়ে কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। ভোটের আগে সন্ত্রাস বাড়লে রাজনৈতিক ঝুঁকিও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী দু’পক্ষের বক্তব্য শুনলেও এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।
ফলে কলহ অব্যাহত।