Islamic Studies

কাশ্মীরের পরীক্ষায় সেরা পেহলুর শহরের শুভম

ইতিহাস তো বটেই! শুধু অ-মুসলিম হিসেবে নয়, কাশ্মীরের বাইরের কারও এই কৃতিত্ব এত দিন ছিল না বলেই জানা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৫১
Share:

শুভম যাদব।

দু’টো মৃত্যু দেখেছিল তাঁর শহর। একটা ২০১৭ সালে, অন্যটা ঠিক তার পরের বছরে। স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে পেহলু খান এবং আকবর (ওরফে রাকবর) খানের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। আর রাজস্থানের সেই অলওয়ার শহরেরই বাসিন্দা, তথাকথিত সংখ্যাগুরু সমাজের এক যুবকের ভাবনাকে উস্কে দিয়েছিল। শুভম যাদব অনেক ভেবেছিলেন। আর ভিতরে ভিতরে ফের টের পেয়েছিলেন ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছেটাকে। বাবা-মাকে বুঝিয়েছিলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করতে চান তিনি।

Advertisement

দু’বছর পরে নিজেই ইতিহাস গড়ে ফেললেন শুভম। কাশ্মীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ় বিভাগে স্নাতকোত্তরের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানটি পেয়েছেন তিনিই। পরীক্ষা হয়েছিল গত ২০ সেপ্টেম্বর, ফল বেরিয়েছে অক্টোবরের ২৯শে। তার পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হামিদ নাসিম রফিয়াবাদি বলেছেন, ‘‘আগে আমরা (এই বিভাগে) অ-মুসলিম ছাত্রদের পেয়েছি। কিন্তু এই প্রথম বার প্রবেশিকা পরীক্ষায় এমন এক জন প্রথম হলেন, যিনি মুসলিম নন।’’

ইতিহাস তো বটেই! শুধু অ-মুসলিম হিসেবে নয়, কাশ্মীরের বাইরের কারও এই কৃতিত্ব এত দিন ছিল না বলেই জানা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘আপত্তিকর’ পোস্ট নিয়ে আইন, তোপের মুখে বিজয়ন

২১ বছরের শুভম দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনের স্নাতক। কলেজে পড়ার সময়েই ইসলাম নিয়ে চর্চার একটা আগ্রহ ছিল তাঁর। নিজের খেয়ালে পড়াশোনা করতেন আরব বসন্ত, ইরান সমস্যা থেকে শুরু করে ইসলামের গোড়ার দিক কিংবা মহম্মদকে নিয়ে। তাঁর কয়েক জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী বন্ধু ইসলামি বিশ্ব-রাজনীতি নিয়ে পড়ছেন। শুভমেরও ইচ্ছে হত, প্রথাগত পড়াশোনার মধ্য দিয়ে সব কিছু আরও বেশি করে জানতে। এ বার সেই সুযোগই তাঁর সামনে।

শুভমের কথায়, ‘‘সমাজে বিভেদ বাড়ছে। আমার মতে, আমরা যদি পরস্পরের সংস্কৃতিকে জানি, একমাত্র তবেই সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। সেই কারণেই এই বিষয়টাকে বেছে নেওয়া।’’ তাঁর মতে, ইসলাম নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ইসলামকে একটা গোঁড়া ধর্ম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অনেক রাষ্ট্রনেতা এই ধর্ম নিয়ে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। এ সবও ইসলাম চর্চা নিয়ে তাঁর স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার ইচ্ছের একটা কারণ। তিনি বলছেন, ‘‘ধর্মীয় মেরুকরণের এই পরিবেশে আমি দুই ধর্মের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করতে চাই।’’

আরও পড়ুন: ‘লাভ জেহাদ’ আইন, দ্বন্দ্বে নীতীশ-বিজেপি

ছোট ভাই পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। বাবা ব্যবসা করেন। ছেলেকে দু’বছর বহু দূরে কাশ্মীরে গিয়ে থাকতে হবে, এটাই একমাত্র চিন্তা বাবা-মায়ের। শুভমের স্বপ্নের দৌড় অবশ্য এখানেই ফুরোচ্ছে না। ভবিষ্যতে সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসতে চান তিনি। আমলা হিসেবে চাকরিজীবনেও স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা তাঁকে সাহায্য করবে বলে শুভম আত্মবিশ্বাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement