গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আপাতত ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে ফেলতে পেরেছেন অশোক গহলৌত। উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সচিন পাইলটকে সরিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কিন্তু তাতেও কি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি শেষ পর্যন্ত বাঁচবে? আপাতত সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে কংগ্রেস এবং গহলৌত শিবিরে। গহলৌত নিজে অবশ্য মুখে বলছেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তাঁর সরকারের। কিন্তু খাতায় কলমে হিসবে করতে বসে মেলানো যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন গহলৌত শিবিরেরই এক বর্ষীয়ান নেতা। অবশ্য স্বস্তিতে নেই পাইলট শিবিরও।
মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দিল্লি যাওয়ার পর থেকেই রাজস্থান কংগ্রেসের অন্দরে চলছে মরুঝড়। মঙ্গলবার সচিন পাইলটকে দলের প্রদেশ সভাপতির পদ এবং মন্ত্রিসভা থেকে ছেঁটে ফেলার পরে সেই ঝড় কিছুটা স্তিমিত হলেও নতুন করে শুরু হয়েছে সংখ্যার হিসেব। বিজেপি ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, আস্থা ভোট ছাড়া গহলৌতের আর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু সেই আস্থা ভোটে গেলে কি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন পাবেন গহলৌত? এই প্রশ্নেই আপাতত তোলপাড় জয়পুরের রাজনীতি।
রাজস্থান বিধানসভায় মোট আসন ২০০। ম্যাজিক ফিগার ১০১। নিজের এবং অন্য দলের সমর্থন মিলিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন ১২২ জন বিধায়ক। এর মধ্যে কংগ্রেসের ১০৭, নির্দল ১০ এবং আরএলডি, সিপিএম ও ভারতীয় ট্রাইবাল দল মিলিয়ে মোট পাঁচ বিধায়ক। উল্টো দিকে বিরোধী বিজেপি শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা ৭৩। তাদের সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক দলের তিন বিধায়ক। এই পরিস্থিতিতে সচিন পাইলট দাবি করে আসছেন, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ২৫ জন বিধায়ক। আবার অশোক গহলৌতের দাবি, ১০৯ জন বিধায়ক তাঁর পাশে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রদেশ সভাপতি ও উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সচিন পাইলটকে সরিয়ে দিল কংগ্রেস
কিন্তু এই ১০৯ জন কোথায়? কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের পর রাজস্থানেও হোটেল রাজনীতি ঢুকে পড়েছে সোমবার। দলের ১০২ জন বিধায়ককে জয়পুরের হোটেলবন্দি করা হয়েছে বলে দাবি গহলৌত শিবিরের। কিন্তু এই শিবিরেরই এক বর্ষীয়ান নেতার সূত্রে খবর, ওই হোটেলে কংগ্রেসের বুক করা রুমগুলির মধ্যে চেক ইন হয়েছে ৮৯টি। তার মধ্যেও আবার দিল্লি থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা রয়েছেন। তবু সোমবার ‘ভিকট্রি সাইন’ দেখিয়েছেন গহলৌত। ম্যাজিক ফিগার নিয়ে প্রকাশ্যে আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টা করলেও তাঁর শিবিরের অন্দরেও যে উদ্বেগ রয়েছে, তা ঘনিষ্ঠ মহলে অনেকেই স্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: বিধায়ক আত্মঘাতী, ইঙ্গিত পোস্টমর্টেমে, জানালেন স্বরাষ্ট্রসচিব
স্বস্তিতে নেই পাইলট শিবিরও। ২৫ বিধায়ক সঙ্গে থাকার দাবি (যদিও গহলৌত শিবিরের দাবি, ১৮ জন বিধায়ক পাইলট শিবিরে রয়েছেন) করলেও তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়নি। ওই ২৫ জনের তালিকায় কারা রয়েছেন, সে বিষয়েও পাইলটের তরফে স্পষ্ট করা হয়নি। তার উপর মঙ্গলবার দলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ খুইয়ে পায়ের তলার মাটি আরও আলগা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও অনেকে সরে আসতে পারেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সচিনের পাশে না দাঁড়িয়ে গহলৌতেই আস্থা রেখেছে কংগ্রেস। অথচ সেই গহলৌতেরও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রদেশের মতো রাজস্থানও যে ‘হাত’ছাড়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা কংগ্রেসের অন্দরেও রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।