বিজেপি নেতা মদনলাল সাইনি। ছবি- পিটিআই
মোগল সম্রাট আকবর মহিলাদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার করতেন। ‘দুষ্কর্ম’ করতেই তিনি ছদ্মবেশে ঢুঁ মারতেন মহিলাদের কর্মক্ষেত্র মীনা বাজারে। বিকানেরের রাজপুত রানির সঙ্গেও দুর্বব্যবহার করেছিলেন মোঘল সম্রাট। আকবরকে নিয়ে এই বিতর্কিত মন্তব্য করলেন রাজস্থান বিজেপির সভাপতি মদনলাল সাইনি। তাঁর এই মন্তব্যকে ‘ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা’ বলে সমালোচনা করা হয়েছে কংগ্রেসের তরফে।
জয়পুরে, মেবারের রাজা মহারাণা প্রতাপের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার রাজস্থান বিজেপির সভাপতি সাইনি বলেন, ‘‘মোগল সম্রাট আকবর মোটেই মহান ছিলেন না। নারী-সঙ্গ উপভোগ করতে তিনি হামেশাই মীনা বাজারে ঢুঁ মারতেন ছদ্মবেশে। সেখানে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার, দুষ্কর্ম করতেন। এই সব ঘটনার কথা ইতিহাসে লেখা রয়েছে। গোটা বিশ্ব জানে।’’
সম্রাট আকবরই চালু করেছিলেন মীনা বাজার। যেখানে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। মীনা বাজার ছিল শুধুই মহিলাদের কর্মক্ষেত্র। সাইনির কথায়, ‘‘নারী-সঙ্গ উপভোগ করতেই আকবর চালু করেছিলেন মীনা বাজার।’’
গত কালের ওই অনুষ্ঠানে মোগল সম্রাট আকবরকে ‘দুশ্চরিত্র’ প্রমাণ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাজস্থান বিজেপির সভাপতি। বলেন, ‘‘আকবর মীনা বাজারে গিয়ে দুর্বব্যবহার করেছিলেন বিকানেরের রাজপুত রানির সঙ্গেও। তাতে এতটাই চটে গিয়েছিলেন বিকানেরের রানি কিরণ দেবী যে, আকবরকে মাটিতে ঠেলে ফেলে দিয়ে মোগল সম্রাটের বুকে তরবারি চেপে ধরেছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে সে দিন বিকানেরের রানির কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল মোগল সম্রাটকে। ওই ঘটনার পর থেকে মীনা বাজারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’’
আরও পড়ুন- সকালে বর্জন, ‘বিদ্রোহের’ মুখে পড়ে রাতেই রাজনাথকে গ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর
আরও পড়ুন- ২১ উতরোতে মমতার ভরসা কি প্রশান্ত কিশোর? নবান্নে দু’জনের বৈঠক, বিদ্রূপে বিজেপি
রাজস্থানে বিজেপি যখন ক্ষমতাসীন ছিল, তখন স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে মোগল সম্রাট আকবরের নামের আগে থেকে ‘মহান’ বিশেষণটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের ইতিহাস বইয়ে তখন এও লেখা হয়, ‘হলদিঘাটির যুদ্ধে আকবর পরাজিত হয়েছিল মেবারের মহারাণা প্রতাপের কাছে।’ পরে যা শুধরে নেওয়া হয়।
সাইনি গত কাল বলেন, ‘‘মহারাণা প্রতাপের সঙ্গে আকবরের কোনও তুলনাই করা চলে না। আমি মনে করি, বই থেকে ওঁর নাম মুছে দিয়ে মহারাণা প্রতাপের সম্মান, কৃতিত্বকে খাটো করা যাবে না। মহারাণা প্রতাপ রয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। সেখান থেকে তাঁকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তাঁকে ইতিহাস থেকেও মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ওঁরা (কংগ্রেস) হয়তো বই থেকে চারটি লাইন মুছে দিতে পারে। কিন্তু ওঁকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।’’
সাইনির ওই মন্তব্যের সমালোচনা করতে দেরি করেনি কংগ্রেস। দলের সভাপতি অর্চনা শর্মা বলেছেন, ‘‘মহারাণা প্রতাপের বীরত্ব, তাঁর গুণাবলীর কথা গোটা দেশ জানে। দেশ গর্ব বোধ করে। কিন্তু বিজেপি নেতা ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। এতে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা দেখা দেবে। সামাজিক ঐক্য নষ্ট হবে। তাই তা নিন্দনীয়।’’
মোগল সাম্রাজ্য নিয়ে অবশ্য বিজেপি নেতাদের মন্তব্য, অসন্তোষ নতুন কিছু নয়। কেন্দ্রে ও বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার আগেও বহু বার বহু রাস্তার মোগল আমলের নাম বদলে ফেলেছে। গত বছর বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরি মোগল সম্রাট আউরঙ্গজেবকে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়েছিলেন।