রণসাজ। গদা হাতে অঞ্জন দত্ত, তীর-ধনুক হাতে রাহুল গাঁধী এবং তলোয়ার হাতে তরুণ গগৈ। শনিবার নগাঁওয়ের সভায়। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
প্রথমে প্রায় হাজার দশেক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রা। তার পরে বিরাট জনসভায় নরেন্দ্র মোদীকে ঝকঝকে বিপণনের ফাঁপা বাক্স হিসেবে তুলে ধরায় বেজায় হাততালি।নগাঁও জেলায় কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর জনসভা ‘হিট’ হওয়ায় অনেকটা শান্তি পেলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও তাঁর সেনাপতি রকিবুল হুসেন। সংসদে রাহুলের বয়স বাড়লেও বুদ্ধি না বাড়া নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিলেন মোদী। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এ দিন রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর পদ অনেক উঁচু। তাঁর মুখে এমন ধরণের কথা মানায় না। আসলে আমার প্রশ্নগুলোর জবাব না থাকায় নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগত আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেন।’’
গত কাল বিকেলে শিলচর থেকে নগাঁও আসার পরে পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলার কংগ্রেসকর্মীদের সঙ্গে সভা করেন রাহুল। এ দিন সকালে নগাঁওয়ের শহীদ ভবন থেকে শুরু করে আঞ্জুমণি ইদগাহ হয়ে বরঘাট বাইপাস পর্যন্ত ছ’কিলোমিটার পদযাত্রা করেন তিনি। বরাবরের মতোই দু’পাশে ছিলেন হাঁটায় দ়ড় দুই নেতা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত এবং মুখ্যমন্ত্রীপুত্র তথা কলিয়াবরের সাংসদ গৌরব গগৈ।
জনসভায় রাহুল প্রথমেই অনলাইন মার্কেটিংয়ের চমকে ঠকে যাওয়া এক যুবকের উদাহরণ টেনে মোদীকে খোঁচা দেন। তিনি বলেন, ‘‘অনলাইনের মিথ্যে চমকে ভুলে খারাপ জিনিস কিনে ঠকে যাওয়া ক্রেতারা টাকা ফেরত চেয়ে মাথা ঠোকেন। মার্কেটিংয়ে দক্ষ নেতা মোদীর চটকদার ভাষণে মুগ্ধ হয়ে ভারতবাসীও একই ভুল করে ফেলেছেন। পরে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন বিজেপির বাইরে চমক থাকলেও ভিতরটা ফোঁপড়া। এখন গোটা দেশের প্রতারিত মানুষ বিজেপির কাছে ‘রিফান্ড’ চাইছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলাম: কালো টাকা কেন ফেরত আনলেন না? যুবকদের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা কবে দেবেন? চোরেদের টাকা উদ্ধার না করে কেন আম-জনতার প্রভিডেন্ড ফান্ডে হাত দেওয়া হচ্ছে? ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সিংহ কতজন বেকার যুবককে কাজ দিয়েছে? আমায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করে, জওহরলাল-ইন্দিরা-রাজীব গাঁধীকে উদ্ধৃত করে মোদী ঘণ্টাখানেক ভাষণ দিলেন বটে, কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো এড়িয়ে গেলেন।’’
মোদী সরকার উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগ নীতি বন্ধ করেছে, অসমকে বিশেষ রাজ্যের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে, গরীবদের টাকায় হাত দিয়েছে, রেলবাজেটে রাজ্যকে কিছুই দেয়নি বলে অভিযোগ ঠুকে রাহুল বলেন, ‘‘কংগ্রেস কৃষক, মজদুর, মহিলা, বেকারদের জন্য লড়ে। আর বিজেপি চলছে পূঁজিপতিদের তাঁবেদারি করে। কিন্তু তাদের প্রশ্ন করা চলবে না।’’ গত দেড় দশকে তরুণ গগৈ অসমে শান্তি ও সমৃদ্ধি এনেছেন বলে দাবি করে রাহুল অভিযোগ করেন, বিজেপি যেখানেই যায় শুধু ভয়, হিংসা, ক্রোধ ছড়ায়। তাদের রুখতে হবে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা টেনে রাহুল বলেন, ‘‘সেখানকার আট হাজার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হাজারখানেক উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রী। ছাত্রনেতা কানহাইয়ার ভাষণ আমি নিজে শুনেছিলাম। সেখানে দেশবিরোধী কোনও উক্তি ছিল না। অথচ কেন্দ্র তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢোকালো, কিন্তু যারা দেশবিরোধী স্লোগান দিল— তাদের ধরা হল না। আমরা জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রদের অধিকারের জন্য লড়ব।’’