রাহুল গাঁধীর সমালোচকরা বলেন, তিনি প্রতি বারই বিদেশ থেকে ফেরার পরে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন। কিছু দিন পরে ফের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
এ বারও বছর শেষের ছুটি কাটিয়ে ইতালি থেকে ফেরার পরে রাহুল গাঁধী আজ তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই তিন কৃষি আইন, অরুণাচলে চিনের জমি দখল ও বালাকোটে বায়ুসেনার হানার তথ্য ফাঁস নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, প্রয়োজন হলে তিনি একাই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। কারণ, সেটাই তাঁর ধর্ম। এ বিষয়ে তিনি বিজেপির থেকেও বেশি ‘ধর্মান্ধ’ বলে দাবি করেছেন রাহুল। মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে আমি ভয় পাই না। আমি সাফসুতরো চরিত্রের লোক। আমাকে ওরা ছুঁতে পারবে না। গুলি করে মারতে পারে।’’
এআইসিসি-র সদর দফতরে এই সাংবাদিক বৈঠকের পরে দলের নেতাদের প্রশ্ন, রাহুল যদি সত্যিই মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান, তা হলে তিনি কংগ্রেস সভাপতি পদে ফিরছেন না কেন? কেন কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে বিরোধী শিবিরকে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা করার চেষ্টা করছেন না?
এই প্রশ্নের উত্তর রাহুল দিতে চাননি। যুক্তি দিয়েছেন, আজ তিনি শুধু কৃষকদের সমস্যা নিয়েই বলতে চান। রাহুল এ কথা বললেও, আন্দোলনকারী কৃষক নেতারা বলছেন, বিরোধী শিবিরের দুর্বলতার জন্যই কৃষকদের প্রায় দু’মাস ধরে দিল্লির সীমানায়, খোলা সড়কে ঠান্ডার মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের শক্তি নেই বলে মোদী সরকারের উপরে যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারছে না।
রাহুলের কাজের ধরন নিয়ে ‘ক্ষুব্ধ’ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘যদি বিজেপি এখন বিরোধী আসনে থাকত আর কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভ, লাদাখ থেকে অরুণাচলে চিনের জমি দখলের অভিযোগ, সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীকে পাকিস্তানে বালাকোট হানার তথ্য আগাম ফাঁসের মতো অস্ত্র হাতে পেত, তা হলে কী ভাবে সরকারকে নাস্তানাবুদ করত, ভেবে দেখুন!’’
বিরোধীরা কি যথেষ্ট শক্তিশালী নয়? এই প্রশ্ন শুনে রাহুলের জবাব, ‘‘বিরোধীদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে হয়। বিরোধীদের নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম, বিচারবিভাগ, সংসদের প্রয়োজন। কিন্তু এই সরকার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আদালতকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। সংসদে বিরোধীদের বলতে দেওয়া হয় না। ঠিক যে ভাবে ইংরেজরা ভারত চালাত, সে ভাবেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।’’ সুপ্রিম কোর্টের ‘বাস্তব ছবি’-ও গোটা দেশ দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন রাহুল।
কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা এই যুক্তি মানছেন। কিন্তু একই সঙ্গে অভিযোগ তুলছেন, আসল সময়ে রাহুল বিদেশে চলে যান বা উধাও হয়ে যান। আজ বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা ঠিক এইখানেই ঘা দিয়েছেন। রাহুল প্রতি মাসেই ছুটি কাটাতে যান বলে কটাক্ষ করেছেন। কৃষি আইন থেকে চিনের জমি দখল নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন রাহুলকে। চটে গিয়ে রাহুলের মন্তব্য, ‘‘এই নড্ডা কে? উনি কি আমার প্রফেসর? দেশের চাষিরা জানেন, রাহুল গাঁধী কী কাজ করেন। আমি ভাট্টা পারসৌলে কৃষকদের পাশে ছিলাম। জমি অধিগ্রহণ আইনে সংশোধনের বিরুদ্ধে ছিলাম। ঋণ মকুবের দাবিতেও ছিলাম। সেখানে তো মোদীজি, নড্ডাজিকে দেখতে পাইনি।’’
রাহুলের দাবি, মোদী সরকারকে কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী চার-পাঁচ জন শিল্পপতি বন্ধুর হাতে সব ব্যবসা তো বটেই এমনকি দেশটাই তুলে দিতে চাইছেন, তা স্পষ্ট। প্রকাশ জাভড়েকরের পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের দশম দফার বৈঠকের আগে সমাধানের সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে চাইছে।