রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
মোদী পদবি অবমাননা মামলায় শুক্রবার দেশের শীর্ষ আদালতে বড় স্বস্তি পেয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এই মামলায় সুরাত আদালত রাহুলকে দু’বছরের জন্য জেলের সাজা শোনালেও, সুপ্রিম কোর্ট তার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সুপ্রিম-রায়ের পরেই যে প্রশ্নটা অবধারিতভাবে উঠতে শুরু করে, তা হল রাহুল কি এ বার সাংসদ পদ ফিরে পাবেন? কারণ, এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণেই সাংসদ পদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্য স্পিকারকে আর্জি জানায় কংগ্রেস। শনিবার এই মর্মে আদালতের রায়ের কপিও লোকসভার সচিবালয়ে জমা দেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। তবে সচিবালয়ের তরফে তা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কংগ্রেসের তরফে রাহুলকে দ্রুত সংসদে ফেরানোর আর্জি জানানো হয়েছে। দল মনে করছে, রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানো নিয়ে লোকসভার সচিবালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন তিনি। তবে এই বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে অধীর শনিবার জানান, যে দ্রুততায় রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছিল, সেই একই দ্রুততায় তাঁর সাংসদ পদ ফেরানোর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে না।
সংবাদমাধ্যমকে অধীর বলেন, “আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরেই আমি স্পিকারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।” অধীর এই প্রসঙ্গে জানান, শনিবার স্পিকার ওম বিড়লা তাঁকে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। অধীরের সংযোজন, রায়ের কপি সেক্রেটারি জেনারেলের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হলে, তিনি জানান, শনিবার ছুটির দিন থাকায় তাঁর দফতর বন্ধ থাকবে। আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, তবে কার কাছে আমি এটা জমা দেব? তিনি আমায় বলেন, স্পিকারকে রায়ের কপি দিতে। স্পিকারের অফিস থেকেই তাঁর কাছে সেটা চলে যাবে বলে জানান তিনি।”
অধীর পরে জানান, তিনি পরে রায়ের কপি, রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের নির্দেশিকা এবং একটি চিঠি লোকসভার সচিবালয়ে পাঠিয়েছেন। সচিব পদমর্যাদার একজন তা গ্রহণও করেছেন। তবে অধীর জানিয়েছেন, তাঁর পাঠানো নথিতে প্রাপকের সই থাকলেও সরকারি কোনও সিলমোহর পড়েনি। যা থেকে কংগ্রেসের অন্দরেই সংশয় ঘনীভূত হয়েছে যে, আদৌ কি রায়ের কপি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে লোকসভার সচিবালয়? এই দোলাচলের মাঝেই অধীর বলেন, “আদালত যখন রাহুল গান্ধীকে স্বস্তি দিয়েছে, তখন স্পিকার এবং তাঁর অফিসের কাছে আমার অনুরোধ, এ ক্ষেত্রে (সাংসদ পদ ফেরানোর ক্ষেত্রে) যেন কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকে।”
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় কর্নাটকের কোলারে ‘মোদী’ পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গত ২৩ মার্চ গুজরাতের সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা দু’বছর জেলের সাজা দিয়েছিলেন রাহুলকে। গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদীর দায়ের করা ওই ‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের জন্য তাঁকে ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন বিচারক। সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২৪ মার্চ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮(৩) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছিলেন।
এর পর রাহুল তাঁকে দোষী ঘোষণা এবং সাজার রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ৩ এপ্রিল সুরাতেরই দায়রা আদালতে (সেশনস কোর্ট) আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আরপি মোগেরা সেই আবেদন খারিজ করে সাজা কার্যকরের রায় বহাল রাখেন। ফলে সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা হাতছাড়া হয় তাঁর। সাজার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগকারী বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদী এবং গুজরাত সরকারকে গত ২১ জুলাই নোটিস পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দু’তরফেই সাজা মকুবের বিরোধিতা করা হয়েছিল। অন্য দিকে, রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করেছিলেন এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার অবমাননা হয়েছে।
গত ৭ জুলাই গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চও সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রাখায় সাজা এড়াতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কেরলের ওয়েনাড়ের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ। আইনজীবীদের একাংশ মনে করেছেন, শীর্ষ আদালত সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সাংসদ পদ ফিরে পেতে পারেন রাহুল। সুরাত দায়রা আদালত এবং গুজরাত হাই কোর্টের মতো রাহুলের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে তাঁর জেলে যাওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়ত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জেলযাত্রা থেকে রেহাইয়ের পাশাপাশি রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর পথও প্রশস্ত করল বলে মনে করছে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।