দেশের লোককে মারছেন মোদী: রাহুল গাঁধী

সংসদীয় সৌজন্যের পালা শেষ। ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে পড়লেন রাহুল গাঁধী। এবং আরও সুর চড়িয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১০
Share:

কর্নাটকে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

সংসদীয় সৌজন্যের পালা শেষ। ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে পড়লেন রাহুল গাঁধী। এবং আরও সুর চড়িয়ে।

Advertisement

শুক্রবারই কৃষকদের সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন রাহুল। দু’পক্ষের মধ্যে সৌজন্য বিনিময়ও হয়। বিজেপির অনেকেই ভেবেছিলেন, সংসদ শেষ। তাই আপাতত হয়তো লড়াইয়ে ইতি টানবেন সনিয়া-তনয়। কিন্তু কোথায় কী! কাল সন্ধ্যাতেই গোয়ায় এক জনসভায় নোট বাতিল নিয়ে মোদী সরকারকে তুলোধোনা করেন তিনি। তার পরেই আজ উড়ে যান চেন্নাই। সেখানে অসুস্থ ডিএমকে প্রধান এম করুণানিধির সঙ্গে দেখা করে ছুটেছেন উত্তর কর্নাটকের বেলাগাভি। সেখানে এক জনসভায় ঝাঁঝালো ভাষায় মোদীকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। এবং সেই সুর গত ক’দিনের তুলনায় অনেক বেশি চড়া। রীতিমতো সংখ্যা, শতাংশের হিসেব দিয়ে মোদীকে নিশানা করে রাহুল বলেন, ‘‘৯৪ শতাংশ কালো টাকা বিদেশে পড়ে আছে। সেটা উদ্ধারের চেষ্টা না করে মোদী দেশে থাকা ৬ শতাংশ কালো টাকা খুঁজতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছেন! দেশের এক শতাংশ মানুষ, যারা লুটেপুটে খাচ্ছে, তাদের না ধরে, বিপদে ফেলা হচ্ছে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষকে!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘চোরকে নয়, মোদী আসলে গরিব মানুষকেই মারছেন!’’

নোট বাতিল নিয়ে এত দিন নানা ভাবে মোদীকে বিঁধলেও রাহুলের এ দিনের মেজাজটা ছিল অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে মারা গিয়েছেন শ’খানেক লোক! আসলে নরেন্দ্র মোদী মিথ্যে কথা বলছেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই নোট বাতিলের বিপর্যয় আসলে মোদী মেড ডিজাস্টার! এই স্যুট-বুটের সরকারকে দিল্লি থেকে হটাতেই হবে।’’

Advertisement

গোড়ার দিকে সংসদ অচল করে সরকারকে প্যাঁচে ফেললেও অধিবেশনের শেষ-পর্বে রাহুলের পরিকল্পনা ছিল বিষয়গুলি সংসদে তুলে ধরা। কিন্তু শাসক-বিরোধী তরজায় অধিবেশন না চলায় তিনি এখন জনসভায় আওয়াজ তুলে মোদী তথা বিজেপির অস্বস্তি বাড়াতে চাইছেন। তাই পরিকল্পনা করেই নোট বাতিলের রাজনীতিকে একেবারে সংসদ থেকে সড়কে, আমজনতার মাঝে নিয়ে গিয়েছেন। সে কারণেই তাঁর এই চরকিপাক। আজ দাদরি তো কাল গোয়া। পরশু কর্নাটক। মোদীর সিদ্ধান্তে আমজনতার কী ভোগান্তি হচ্ছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছেন রাহুল।

প্রশ্ন অন্য জায়গায়। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে কি যাবেন না রাহুল? কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘উত্তরপ্রদেশে তো কার্পেট বম্বিংয়ের পরিকল্পনা আছে রাহুলের। তার আগে গোটা দেশে জনসংযোগ বাড়াতে চাইছেন তিনি। মোদী-বিরোধী রাজনীতির মুখ হয়ে উঠতে চাইছেন।’’

আর এটাই কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে বিজেপির। সংসদের শেষ পর্বে রাহুল যে ভাবে বিরোধী শিবিরের মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন, তাতে বেশ অস্বস্তিতে তারা। গত কাল

কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দেখা করে বিরোধী জোট ভাঙার চেষ্টা চালান বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সাময়িক ভাবে হলেও সেই কৌশল যে খেটে গিয়েছে, তা বুঝেই রাহুল আজ অসুস্থ ডিএমকে প্রধানকে দেখতে চেন্নাই যান। সূত্রের খবর, সরকার-বিরোধী লড়াই কী ভাবে বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত টানা যায়, তা নিয়ে ডিএমকে নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।

স্বাভাবিক ভাবেই পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপি। আজ এক যোগে একাধিক বিজেপি নেতা ইউপিএ আমলের দুর্নীতি টেনে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে এক জনসভায় বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলে আকাশে (টু’জি থেকে অগুস্তা কপ্টার), মাটিতে (কমনওয়েলথ), মাটির নীচে (কয়লা), সমুদ্রে (সাবমেরিন)— সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছে!’’ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী মিথ্যে কথা বলছেন। দশ বছর ধরে তাঁর সরকার কালো টাকার বিরুদ্ধে কী করছিল, তা সবাই জানে। এখন নরেন্দ্র মোদী কালো টাকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে সাফল্য পাচ্ছেন দেখে রাহুল-সহ বিরোধীদের গাত্রদাহ হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement