একজোট: দলের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসে একসঙ্গে কেক কাটলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। শুক্রবার নয়াদিল্লির সদর দফতরে। পিটিআই
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাইছেন মনমোহন সিংহ। সনিয়া গাঁধী বলছেন, এত দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে রাহুল গাঁধী কী ভাবে দায়িত্ব নেবেন?
পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তির সমঝোতা করতে চাইছেন মনমোহন। সনিয়ার প্রশ্ন, নতুন প্রধানমন্ত্রী এসে কী করবেন?
বিরক্ত মনমোহন বলছেন, তিনি কি জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের (এনএসি) কথা শুনে চলবেন? ইউপিএ জমানায় যে এনএসি-র প্রধান ছিলেন সনিয়া— এ সব ‘দৃশ্য’ই আছে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এ। যে ছবি মুক্তি পাচ্ছে দু’সপ্তাহ পরে। সেটির পৌনে তিন মিনিটের ট্রেলার ছড়িয়ে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে কাল রাত থেকে হইহই করে নেমে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের সেনাপতিরা। যা দেখে তেতে ওঠেন কংগ্রেসের ছোট-মাঝারি নেতারাও। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা বলেন, মুক্তির আগে ছবি দেখাতে হবে। মধ্যপ্রদেশের এক নেতার হুমকি, ছবি নিষিদ্ধ হবে রাজ্যে। কংগ্রেসকে প্যাঁচে পড়তে দেখে বিজেপি দ্বিগুণ উৎসাহে বলতে শুরু করে, কোথায় গেল রাহুলের সহিষ্ণুতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাঠ?
খেলা ঘোরালেন খোদ রাহুলই। সনিয়ার সঙ্গে আগে কথা সেরে রেখেছিলেন। নিজে চুপ থাকলেন, দলকেও বললেন। দলের জন্মদিনে কংগ্রেস দফতরে মনমোহনের হাত ধরে কেক কেটে রাহুল বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপির প্ররোচনায় পা দেবেন না। যত বেশি হাঙ্গামা হবে, ততই প্রচার। উপেক্ষা সেরা পথ। এর আগেও গাঁধী পরিবারকে দুষে ছবি হয়েছে। উপেক্ষার কৌশলেই ছবি নজর কাড়েনি। সেই বার্তা দলে ছড়িয়ে দিতেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বললেন, নিষিদ্ধ করার প্রশ্নই নেই। মহারাষ্ট্রের নেতাও বলেন, ‘‘আমাদের ছবি দেখাতে হবে না।’’ মন্তব্য এড়ালেন খোদ মনমোহন। দলের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ভুয়ো প্রচার করে বেকারি, ভুলে ভরা জিএসটি, নোটবন্দি, গ্রামীণ দুর্দশা, ব্যর্থ মোদীনমিক্স থেকে বিজেপি দৃষ্টি ঘোরাতে পারবে না।’’
আরও পড়ুন: পর্দায় সার্জিকাল স্ট্রাইক রাজনীতির
সব মিলে চাপে পড়ল বিজেপিই। তারা ভেবেছিল, গাঁধী পরিবারকে তাতিয়ে ভোটের আগে হাওয়া গরম হবে। হল উল্টো। মোদীর উপরেই খড়গহস্ত বিরোধী শিবিরের অন্য দল। ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘‘অসংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীর উপরে ছবির অপেক্ষায় আছি। ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’-এর থেকে খারাপ হবে।’’ আরজেডির সাংসদ জয়প্রকাশ নারায়ণ যাদব বললেন, ‘‘ডিজাসট্রাস প্রাইম মিনিস্টার’ ছবি কবে হচ্ছে?’’ শরদ পওয়ারের দল বলল, ‘‘ছবির পরিচালকই গ্রেফতার হন জিএসটি ফাঁকি দিয়ে। তাঁর বাবার বিরুদ্ধেও ব্যাঙ্ক প্রতারণার মামলা রয়েছে!’’
এ ছবি হয়েছে সঞ্জয় বারুর বইয়ের ভিত্তিতে। মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বারু ছিলেন মিডিয়া উপদেষ্টা। কিন্তু মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার আগেই তিনি পদ ছাড়েন। ২০১৪ সালে ঠিক লোকসভা ভোটের আগেই ওই বই প্রকাশে আপত্তি জানান মনমোহন-কন্যা। আজই দিল্লিতে আর একটি বই প্রকাশ করেন বারু। তাঁর বইয়ে কি এ সব কথা ছিল, যা ছবিতে আছে? পদ ছেড়েও তিনি সে সব জানলেন কি করে? তিনি কি মিথ্যে লিখেছেন? হাজারো প্রশ্ন ধেয়ে এল। বারু উত্তর এড়িয়ে বললেন, তিনি ছবির স্বত্ব বেচেছেন মাত্র। আর ছবির ট্রেলার বলছে, বারুর বই ভিত্তি হলেও সব চরিত্র কাল্পনিক।