আয়কর রায় নিয়ে প্রশ্ন, সহারা ডায়েরি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন রাহুল

সহারা ডায়েরির যে পাতায় ‘টাকা প্রাপক’ হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ছিল, তার কোনও মূল্য নেই বলে জানিয়ে দিল আয়কর মীমাংসা কমিশন (আইটিএসসি)। আর তার পরেই সুর আরও চড়িয়ে রাহুল গাঁধীর তোপ, ‘‘বিবেক সাফ থাকলে তদন্তে ভয় পাচ্ছেন কেন মোদীজি?’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৩
Share:

সহারা ডায়েরির যে পাতায় ‘টাকা প্রাপক’ হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ছিল, তার কোনও মূল্য নেই বলে জানিয়ে দিল আয়কর মীমাংসা কমিশন (আইটিএসসি)। আর তার পরেই সুর আরও চড়িয়ে রাহুল গাঁধীর তোপ, ‘‘বিবেক সাফ থাকলে তদন্তে ভয় পাচ্ছেন কেন মোদীজি?’’

Advertisement

সহারা ও আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর দফতরে হানা দিয়ে পাওয়া ডায়েরিতে ‘গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী’ এবং ‘মোদীজিকে’ টাকা দেওয়ার কথা লেখা আছে— এই তথ্য তুলেই গত বেশ কিছু দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির আওয়াজ তুলেছেন রাহুল। এ নিয়ে লাগাতার প্রচারও করে চলেছেন তিনি। কিন্তু অতি সম্প্রতি, আয়কর মীমাংসা কমিশন সহারা ডায়েরি নিয়ে শুনানি শেষে সংস্থাকে ছাড় দিয়ে জানিয়েছে, ওই পাতার ভিত্তিতে না করা যাবে কোনও মামলা, না আদায় করা যাবে কোনও জরিমানা। সহারা কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দিয়েছেন, সংস্থার কোনও বিক্ষুব্ধ কর্মীর কাজ ছিল ওই ডায়েরি। ওই পাতার কোনও মূল্যই নেই। এর পরেই রাহুলের অভিযোগ, সহারাকে তড়িঘড়ি রক্ষাকবচ আসলে মোদীরই রক্ষাকবচ! বিষয়টি নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছে আম আদমি পার্টিও।

কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, যে ভাবে তড়িঘড়ি সহারাকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে, তা সন্দেহজনক। এবং সে জন্যই এই ‘ক্লিনচিট’ রাহুলকে সুর চড়াতে সাহায্য করবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সন্দেহের কারণ, প্রথমে আয়কর সেটেলমেন্ট কমিশন ওই ডায়েরি নিয়ে সহারার তদন্তের আবেদনই খারিজ করে দেয়। পরে মোদীর চাপে তারা ফের আবেদন গ্রহণ করে। সিংহ ভাগ ক্ষেত্রে এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দিতে ১৬-১৮ মাস সময় লাগে। অথচ এ ক্ষেত্রে মাত্র তিনটি শুনানি হয়েছে এবং গত ৭ নভেম্বর শেষ শুনানির মাত্র তিন দিনের মধ্যে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়েছে! কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে পুরো বিষয়টা অতি দ্রুত সারা হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী জানতেন, রাহুল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ আনতে চলেছেন। তাই ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি নিজেকে নিষ্কলঙ্ক দেখাতে চেয়েছেন। যদিও এ সব করে উনি পার পাবেন না।’’

Advertisement

আইটিএসসি-র রিপোর্ট নিয়ে সরব দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালও। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী কি ভয় পেলেন?’’ সহারা ও বিড়লার ডায়েরি নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কেজরীর দলের প্রাক্তন নেতা প্রশান্ত ভূষণ। শীর্ষ আদালত প্রথমে এটিকে পর্যাপ্ত প্রমাণ হিসেবে মানতে চায়নি। তার পর আরও নথি আদালতে জমা দেন প্রশান্ত। এ নিয়ে শুনানি হবে ১১ জানুয়ারি। প্রশান্ত ভূষণের বক্তব্য, আইটিএসসি-র রায়ের পরেও সুপ্রিম কোর্টের মামলায় কোনও প্রভাব পড়বে না। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার সহারা ডায়েরির ওই নথিকে শুধু ‘মূল্যহীন’ করে দেখাচ্ছে না, তথ্যপ্রমাণ লোপাটেরও চেষ্টা করছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, ভিভিআইপি কপ্টার কেলেঙ্কারিতে এ ভাবেই কয়েক জন রাজনীতিকের সম্ভাব্য আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে সিবিআই এখন একাধিক দলের বিরুদ্ধেও তদন্ত চালাচ্ছে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘সেখানে ‘এপি’ লেখাকে ‘আহমেদ পটেল’ ধরে নিয়ে সিবিআই তদন্ত করছে! আর সহারা বা বিড়লার ডায়েরিতে তো স্পষ্ট ভাবে ‘গুজরাত সিএম’, ‘মোদীজি’ কথাগুলো লেখা আছে! তা হলে সিবিআই চুপ কেন?’’ একই প্রশ্ন করে প্রশান্ত ভূষণের বক্তব্য, ডায়েরির পাতায় মোদীর নাম লেখা থাকা সত্ত্বেও আয়কর দফতর গ্রাহ্য করছে না। কিন্তু অন্য মামলায় কী ভাবে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তারা?

ইতিমধ্যেই সব রাজ্যে মোদীকে নিশানা করে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল। দলের নেতাদের কাছে তাঁর বার্তা, ‘এই নথি একশো শতাংশ সত্য আর সে কারণেই ভয় পাচ্ছেন মোদী। রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে প্রচার করতে হবে ‘নরেন্দ্র মোদী চোর’! কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সামনের সপ্তাহে রাহুল একটি বড় সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছেন। সেখানে এই ধরনের বিষয় নিয়ে আরও বড় আন্দোলনে নামবেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement