কর্নাটকে এক জনসভায় রাহুল। ছবি: পিটিআই।
ধনী, কালো টাকার কারবারিদের বিরুদ্ধে গরিব, সৎ মানুষের লড়াই। নোট-বাতিলকে এই লড়াইয়েরই চেহারা দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই লড়াইয়ে তিনি অবশ্যই গরিবের পাশে, রবিনহুডের মতো। উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে ভোট-যুদ্ধের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদীর সেই রবিনহুডের পোশাকেই কালি ছেটাতে নামলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু জানিয়ে দিলেন, তিনি রাজনৈতিক ভাবে মোদীকে পরাস্ত করতে চান, ব্যক্তিগত আক্রমণে নয়। কংগ্রেসের সভা থেকে মোদীর বিরুদ্ধে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান উঠেছিল। কিন্তু তাকে নাটকীয় ভাবে থামিয়ে দেন রাহুল। নোট বাতিল বিতর্কে মোদী যখন ইন্দিরা থেকে রাজীব গাঁধীকে টেনে আনছেন, তখন মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন রাহুল।
আজ উত্তরপ্রদেশে একই সঙ্গে জনসভা ছিল মোদী ও রাহুলের। কানপুরে গিয়ে মোদী ফের দাবি করেন, তিনি সৎ, গরিব মানুষের হয়ে লড়াই করছেন। তার পরেই জৌনপুরের জনসভায় রাহুলের অভিযোগ, মোদীর নোট বাতিলের আসল লক্ষ্য হল দেশের ৫০টি ধনী পরিবারকে ফায়দা পাইয়ে দেওয়া। তাঁর দাবি, এই ৫০টি পরিবারই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে। তাঁর প্রচারে অর্থ ঢেলেছে। তাঁদের ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা মকুবও করেছেন মোদী। এ বার আরও ৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করতে চলেছেন।
জৌনপুরের জনসভা শুরু হতেই নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান তোলেন কংগ্রেস কর্মীরা। রাহুল সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের থামিয়ে দেন। বলেন, ‘‘মোদীজি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ওঁর সাথে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই রয়েছে। কিন্তু মুর্দাবাদ স্লোগান দেওয়াটা কংগ্রেসের কাজ নয়। মুর্দাবাদ কট্টরপন্থীদের স্লোগান। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের লোকেরা এ সব বলে থাকেন।’’ কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, এই ঘরানা রাহুলের নিজস্ব। কারণ লোকসভা ভোটের আগে-পরে মোদী বারবার রাহুলকে ‘শাহজাদা’ বলে আক্রমণ করেছেন। এমনকী সনিয়াকে টেনে এনে ‘মা-বেটা’ বলে নিশানা করেছেন। কিন্তু নোট বাতিলের পরে মোদীর বৃদ্ধা মা ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যাওয়ায়, রাহুলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। রাহুল বলেছিলেন, তিনি কারও মা-কে অসম্মান করেন না। এ ভাবেই মোদীর সঙ্গে নিজের ফারাক দেখাতে চাইছেন রাহুল।
কিন্তু তা-ই বলে মোদীর উপরে চাপ কমাচ্ছেন না কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। উত্তরপ্রদেশের জনসভার পর পরশু, বুধবার গুজরাতে মোদীর জন্মভূমি, মেহসানায় যাচ্ছেন তিনি। গোরক্ষক বাহিনীর হাতে দলিত যুবকরা নির্যাতিত হওয়ার পর গুজরাতে গিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু নোট বাতিলের পরে এই প্রথম। মেহসানাতে পাতিদারদের আন্দোলনও চরম আকার নিয়েছিল। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই গুজরাতের ওই এলাকাকেই বেছে নিয়েছেন রাহুল। তবে মেহসানাতেই থামছেন না তিনি। পরের দিনই ফের উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচে জনসভা করবেন। ওই দিনই বারাণসীতে মোদীর জনসভা রয়েছে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, রাহুল আসলে নোট বাতিল নিয়ে চাপে থাকা মোদীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছেন।
বাহরাইচের পরের দু’দিন উত্তরাখণ্ডের আলমোড়া, হিমাচলের ধর্মশালায় রাহুলের সভা। এর পর রাহুল যাবেন রাজস্থানেও।
এত দিন রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ‘পার্ট-টাইম’ রাজনীতিক। যখন তখন ছুটিতে চলে যান। এ বার কিন্তু অন্য রাহুলকে দেখা যাচ্ছে বলে কংগ্রেসের নেতারাই মানছেন। কারণ বেশ কিছু সময় ধরে টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। এ বার বড়দিনের সময় লম্বা ছুটিতেও যাচ্ছেন না। বরং ছুটির মধ্যেই বিরোধী নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চাইছেন। ২৭ ডিসেম্বর বৈঠক হতে পারে। তবে কংগ্রেস শিবিরের খবর, বছর শেষে রাহুল বিদেশেও যেতে পারেন।
সংসদের অধিবেশনের শেষ দিনে মোদীর কাছে দরবার করতে গিয়েছিলেন রাহুল। উত্তরপ্রদেশে তাঁর ৩০ দিনের যাত্রার সময় কৃষকদের দাবিদাওয়া জানিয়ে ফর্ম পূরণ করতে বলেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। সেই প্রসঙ্গ তুলে আজ মোদীকে আক্রমণ করেন রাহুল। বলেন, ‘‘কৃষকরা তিনটি দাবি করেছিলেন। ঋণ মকুব, বিদ্যুতের বিল অর্ধেক ও ফসলের সঠিক দাম। মোদী শোনেননি। আমি নিজে গিয়েছিলাম। বলেছি, দেশের কৃষক রোজ আত্মহত্যা করছে। আপনি বড়লোকের ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ মকুব করছেন। কৃষকদের ঋণ মাফ করছেন না কেন? মোদী প্রশ্নের উত্তর দেননি। একটি কথাও বলেননি।’’
মোদী যতই গরিবের ত্রাতা সেজে রবিনহুডের পোশাক গায়ে চড়ান না কেন, তাঁকে এখন ‘স্যুট-বুট’-এই বন্দি করে রাখতে চাইছেন রাহুল।