ফাইল চিত্র।
সেই ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির হুলেই ফের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিঁধলেন রাহুল গাঁধী। বিধ্বস্ত অর্থনীতি আর চড়া বেকারত্বের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদীর ‘অচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন ফেরিকে নিয়ে কটাক্ষ করলেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, অর্থনীতির বেহাল দশা আর কাজের বাজারের বিবর্ণ ছবিকে লুকিয়ে রাখতে শুধু নিত্য নতুন প্রচারের ফিকির খুঁজছে কেন্দ্র।
প্রতি বছর অন্তত ২ কোটি নতুন কাজের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে দিল্লির মসনদ দখল করেছিলেন মোদী। আর আজ একটি খবরকে উদ্ধৃত করে কংগ্রেস নেতা রাহুলের টুইট, “গত চার মাসে প্রায় ২ কোটি মানুষের কাজ গিয়েছে। ২ কোটি পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। ফেসবুকে শুধু মিথ্যে খবর আর ঘৃণা ছড়িয়ে এই বেকারত্ব আর অর্থনীতির সর্বনাশের খবর চাপা দেওয়া যাবে না।” কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ১.৯ কোটি মানুষের চাকরি গিয়েছে। শুধু জুলাইয়ে ৫০ লক্ষ। কৃষি এবং নির্মাণ শিল্পে কাজ খোয়া গিয়েছে ৪১ লক্ষ। সব মিলিয়ে, এখনও পর্যন্ত কাজ গিয়েছে প্রায় ১৪ কোটি!” জুলাইয়ে ৫০ লক্ষ কাজ যাওয়ার খবরকে উদ্ধৃত করে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিরও টুইটারে লিখেছেন, “এটিই মোদীর সাফল্য। সেই অচ্ছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি ২০১৪ সালে জোর গলায় দিয়েছিলেন তিনি। এর সঙ্গে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়েরও যোগসূত্রও খুব কম। আর করোনাও ২৪ ঘণ্টাতে প্রাণ কেড়েছে ১,০৯২ জন ভারতীয়ের।”
অর্থাৎ বিরোধীদের অভিযোগ, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোদী সরকার যেমন দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ব্যর্থ, তেমনই তাদের ভুল নীতি পথে বসিয়েছে অর্থনীতিকে। জিডিপি সঙ্কোচনের পথে। নতুন কাজের সুযোগ তৈরি দূর অস্ত্, চাকরি যাচ্ছে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে। লাফিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। অথচ এই সমস্ত কিছুকে কার্পেটের তলায় চাপা দিতে একের পর এক ইভেন্ট সাজাচ্ছে মোদী সরকার। কখনও রাম মন্দিরের শিলান্যাস, তো কখনও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কিংবা নতুন শিক্ষা নীতি নিয়ে ব্যাপক প্রচার। ত্রাণ প্রকল্প যা ঘোষণা করা হয়েছে, তা-ও শুধু ঋণের সুবিধায় ঠাসা। সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই সেখানে তেমন নেই। হদিস নেই, কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে কাজের বাজার। অথচ উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৬ অগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশে বেকারত্বের হার ফের পৌঁছে গিয়েছে ৯ শতাংশের উপরে। লকডাউন ঘোষণার ঠিক আগের থেকেও যা বেশি!
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে বিপুল আধাসেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ
শুধু তা-ই নয়। করোনার কামড়ে দেশে শুধু পর্যটন শিল্পেই ২ থেকে ৫.৫ কোটি কাজ গিয়েছে বলে সম্প্রতি কবুল করেছে কেন্দ্র। অবস্থা তথৈবচ বিমান পরিবহণ শিল্পের। সূত্রের খবর, সোমবার পরিবহণ এবং বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তা মেনেছেন ওই দুই মন্ত্রকের সচিব। বেহাল দশা বাকি ক্ষেত্রেরও। অথচ এই সমস্ত বিষয় থেকে নজর ঘুরিয়ে দেশের মানুষের মন ধর্ম, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা আর মোদী বন্দনায় মজিয়ে রাখতেই বিজেপির প্রচারযন্ত্র সক্রিয় বলে বিরোধীদের দাবি।