রাহুল গাঁধী। ছবি পিটিআই।
আগামী মাসের ১৭ তারিখ ভিডিয়ো পর্দায় মুখোমুখি হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রধানমন্ত্রী শি চিনফিং। লাদাখে মার্চ মাসে সংঘাত শুরু হওয়ার পরে বিভিন্ন স্তরে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেষ্টা হলেও, আসন্ন বৈঠকটিতেই প্রথম হতে চলেছে শীর্ষতম পর্যায়ের কথা। উপলক্ষ ব্রিকসভুক্ত রাষ্ট্রগুলির দ্বাদশ সম্মেলন, কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, গোটা সম্মেলনের ভরকেন্দ্র থাকবে সেই ভারত এবং চিনের সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক টানাপড়েনই। তবে, এই বৈঠকে যাওয়ার আগে বেজিং প্রশ্নে ঘরে বাইরে অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে মোদীর।
সামরিক স্তরে দু’শের দফায় দফায় আলোচনা (১২ অক্টোবর রয়েছে কমান্ডার পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠক), রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে ভারত-চিনের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক হয়ে গিয়েছে। পাঁচটি বিষয়ে সহমত হয়ে যৌথ বিবৃতিও এসেছে। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতে ঢুকে আসা পিএলএ, ফেরার কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত দেখায়নি। বরং শীতের প্রস্তুতির জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে চিনা সেনারা।
চিন সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সীমান্তের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রসরঞ্জাম, ব্যারাক, সৌরশক্তির ব্যবস্থাসম্পন্ন তাঁবু, চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে আসছে বেজিং সামরিক নেতৃত্ব। বার্তা স্পষ্ট, অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাদের এখান থেকে নড়ানো যাবে না। কূটনৈতিক এবং সামরিক আলোচনা নিজের গতিতে চলবে। কিন্তু ভারতীয় ভূখণ্ডে জাঁকিয়ে বসে থাকবে চিনা সেনা। সিয়াচেনের মতোই ভারত-চিন সীমান্তে একটি নতুন সংঘর্ষবিন্দুর জন্ম হল— এমনটাই আশঙ্কা করছেন রণকৌশল বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: রাস্তা আটকে আন্দোলন নয়: আদালত
কৃষি সংক্রান্ত বিল এবং উত্তরপ্রদেশের হাথরস কাণ্ডের পাশাপাশি বিজেপি সরকারের এই তীব্র অস্বস্তির জায়গাটিকে নিয়ে আক্রমণ করতে কসুর করছে না কংগ্রেস। রাহুল গাঁধী গোড়া থেকেই চিন নিয়ে অতি সক্রিয়। এর আগেও একাধিক বার চিন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গত কাল তিনি একধাপ এগিয়ে কার্যত বুক ঠকে বলেছেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় থাকলে ১৫ মিনিটে চিনকে ছুঁড়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিত!
আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলনে ধুন্ধুমার সিরসায়
প্রশ্ন হল, এতটাই সহজে যে চিনের মতো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, এটা কংগ্রেস নেতৃত্বও জানেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রশ্নে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে যে রকম ভোটে কাজে লাগিয়ে থাকেন মোদী-অমিত শাহেরা, রাহুল সেই হাওয়াকেই তাঁদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাহুলের কথায়, “প্রধানমন্ত্রী নিজেকে দেশভক্ত বলেন, কিন্তু গোটা দেশ জানে যে চিনা সেনা ভারতের ভিতরে ঢুকে রয়েছে। এটা কী ধরনের দেশভক্তি। আমার সরকার হলে আমরা চিনকে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিতাম। পনেরো মিনিটও লাগত না। আমাদের স্থলসেনা এবং বায়ুসেনা চিনকে ১০০ কিলোমিটার পিছনে ফেলে দিত।” তাঁর কথার পাল্টায় বিজেপি নেতা অমিত মালব্য অবশ্য যুক্তি জোগাতে না পেরে কার্যত ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বলেছেন, “কাপুরুষ নেহরুর নাতির ঘরের পুতি, স্বৈরতন্ত্রী ইন্দিরার নাতি, হার মেনে নেওয়া রাজীব এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সনিয়ার পুত্রই এমন কথা বলতে পারেন।”