লালুপ্রসাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধী। ছবি: টুইটার।
বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ ঘোষণার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাহুল গান্ধীকে ‘আমাদের সবথেকে প্রিয়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাহুল গান্ধীর লোকসভার ফেরার রাস্তা খুলে যাওয়ার পরে তৃণমূলনেত্রী বললেন, এতে ইন্ডিয়া জোটের এককাট্টা হয়ে লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ নিয়ে খবর শুনে আমি খুশি।’
গত মার্চ মাসে সুরাতের আদালতের রায়ে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। সে সময় বিরোধী শিবিরের দলগুলির মধ্যে সম্পর্ক তেমন মধুর ছিল না। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে কংগ্রেস সম্পর্কে ‘অ্যালার্জি’ ছিল। আম আদমি পার্টির সঙ্গেও কংগ্রেসের তিক্ততা বজায় ছিল। তা সত্ত্বেও গুজরাতের নিম্ন আদালতের রায়ে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার নিন্দা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়ালরা। মমতা সে সময় বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর ‘নিউ ইন্ডিয়া’-য় বিরোধী নেতারা বক্তৃতা দিলে সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে একে বিচারবিভাগের জয় বলেও মমতা উল্লেখ করেছেন। কেজরীওয়ালও জানান, রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাকে ‘অন্যায্য’ ছিল। এম কে স্ট্যালিন, ওমর আবদুল্লা, তেজস্বী যাদবের মতো বিরোধী শিবিরের নেতারাও সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রাহুল এ দিন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেসের সদর দফতরে আসেন। দফতরে উৎসব শুরু হয়ে যায়। রাহুল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে দেখা করেন। মিষ্টিমুখ হয়। রাহুল সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ যে ভাবে ভালবেসেছেন, পাশে থেকেছেন, তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।’’
রাহুল সন্ধ্যায় খড়্গের সঙ্গে তামিলনাড়ুর নেতাদের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন। তারপরে লালুপ্রসাদের বাড়ি যান। তাঁর স্বাস্থ্যের খবর নেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, দশ বছর আগে মনমোহন সরকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া লালুপ্রসাদের সাংসদ পদ বাঁচাতে অধ্যাদেশ জারি করেছিল। যাতে সাংসদ-বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাতে স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য তিন মাস সময় মেলে। সে সময় রাহুল তার বিরোধিতা করেছিলেন। অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ওই অধ্যাদেশ থাকলে রাহুলের মার্চ মাসে সাংসদ পদ খারিজ হত না।
অনাস্থা প্রস্তাবের আগেই রাহুলের লোকসভায় ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বিজেপি নেতৃত্ব চিন্তায় পড়েছেন। যদিও বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় বলেছেন, রাহুল গান্ধী কত দিন রক্ষা পাবেন? আগেও সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে ভুল কথা বলার জন্য তিনি ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন। বীর সাভারকরকে অপমান করার মতো বহু মামলা রাহুলের বিরুদ্ধে ঝুলে রয়েছে। রাহুল, সনিয়া গান্ধী ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় অভিযুক্ত। তাঁরা জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে যে কোনও মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেই তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাবে। লালু প্রসাদ, জয়ললিতার পদ খারিজ হয়েছিল। রাহুল বরফের একটা পাতলা চাঙড়ের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘রাহুলের বিরুদ্ধে সব মামলা বিজেপির নেতা-কর্মীদের দায়ের করা। এর থেকেই স্পষ্ট, বিজেপি রাহুলের রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে পারছে না বলে মামলা-মোকদ্দমা করছে।’’