Rahul Gandhi

বিরোধীদের তরফে অনাস্থা বিতর্কের সূচনা কি রাহুলের হাত ধরে, জল্পনা, বৈঠক বিজেপির

বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও কার্যত সেই প্রস্তাব পাশের সম্ভাবনা নেই। সম্ভাবনা নেই মোদী সরকারের পতনের। ৫৪৩ সাংসদের লোকসভায় সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ২৭২ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৭
Share:

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হবে আর কিছু ক্ষণ পরেই। সূত্রের খবর, বিরোধীদের তরফে সেই অনাস্থা বিতর্কের সূচনা করতে পারেন প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় সংসদে প্রত্যাবর্তন করা কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুল গান্ধী। এমনটাই জানা গিয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সূত্রে। তবে রীতি অনুযায়ী আলোচনা শুরু করার কথা লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর। তবে সেই রীতি এ বার ভাঙতে পারে বলে জল্পনা।

Advertisement

এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আগে সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছে বিজেপি। সেখানে দলের অবস্থান এবং অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে দলের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। অনাস্থা বিতর্কের সময় কেন্দ্রের তরফে অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামণ, স্মৃতি ইরানি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং কিরেন রিজিজু বক্তব্য রাখবেন। সূত্রের খবর, বিতর্কে অংশ নেবেন বিজেপির অন্য পাঁচ সাংসদ। তবে সংসদে প্রত্যাবর্তনের পরের দিনই রাহুলের বক্তৃতা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই ‘ইন্ডিয়া’র তরফে মোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে নোটিস জমা দিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। সেই সঙ্গে তেলঙ্গানার শাসকদল বিআরএসের হয়ে পৃথক ভাবে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিস জমা দিয়েছিলেন লোকসভার সাংসদ নামা নাগেশ্বর রাও। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা জানান, সেই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে মঙ্গলবার (৮ অগস্ট) আলোচনা শুরু হবে সংসদে। ১০ অগস্ট অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও কার্যত সেই প্রস্তাব পাশের কোনও সম্ভাবনা নেই। বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই মোদী সরকারের পতনের। কারণ, ৫৪৩ সাংসদের লোকসভায় সরকারের পতন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন ২৭২ সাংসদের সমর্থন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সাংসদ সংখ্যা ৩৩২। উপরন্তু, ওড়িশার ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআরের সমর্থন এনডিএ-এর দিকেই। লোকসভায় এই দু’দলের সাংসদের সংখ্যা ৩৪। অর্থাৎ, কেন্দ্রের সমর্থনে থাকতে পারেন মোট ৩৬৬ জন। মণিপুরের গত ৩ মে থেকে শুরু হওয়া হিংসা নিয়েই ক‌েন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল ২৬টি বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’। মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী যাতে সংসদে আসেন, সেই কারণেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।

Advertisement

গত ২০ জুলাই বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকে মণিপুরকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিবৃতির দাবিতে বিরোধীদের শোরগোলের জেরে বার বার মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন। বিরোধীদের বিক্ষোভে অধিবেশন ক্রমাগত ব্যাহত হয়েছে। বাদল অধিবেশন শুরুর প্রথম থেকেই বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছে। তাদের দাবি, গত তিন মাস ধরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। হিংসাদীর্ণ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৭০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তরফে কোনও বক্তব্য নেই। অন্য দিকে, সরকার সেই আলোচনায় সম্মত হলেও স্পষ্ট করেছে, প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে সংসদে কোনও বক্তব্য পেশ করবেন না। সরকারের যুক্তি, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৭ সালেও মণিপুর বড়সড় হিংসার আগুনে জ্বলেছিল। একটি ক্ষেত্রে সংসদে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি এবং অন্য বার ‘নামমাত্র’ বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। তাই এ ক্ষেত্রেও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পেশের কোনও কারণ নেই বলেই নাকি মনে করছে সরকার।

সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে মণিপুর নিয়ে আলোচনা থেকে ‘পালিয়ে যাওয়া’র অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মণিপুরের পরিস্থিতি এবং সেখানে সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। অনাস্থা প্রস্তাব এনে শক্তি প্রদর্শন করা নয়।’’

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির আনা অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তবে সে প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। সরকারের পক্ষে ভোট দেন ৩২৫ জন সাংসদ। অন্য দিকে, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছিল মাত্র ১২৬টি।

ইতিহাস বলছে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই নিয়ে ২৮তম অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে চলেছে। অতীতে দেশের তিন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই, ভিপি সিংহ এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী বিরোধীদের আনা এমন অনাস্থা প্রস্তাবেই গদি হারিয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম অনাস্থা প্রস্তাবটি এনেছিলেন জেবি কৃপালণী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement