পঞ্চায়েতে কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিদের সম্মেলনে রাহুল গাঁধী, অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। শুক্রবার নগাঁওয়ে উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরীবালের ছকেই নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধলেন রাহুল গাঁধী।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে শিলচর এসে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি সরাসরি নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রীকেই। বিহারের ভোটে ঠিক যে কৌশলে বিজেপিকে পরাস্ত করেছিলেন নীতীশ কুমার— এ দিন রাহুল কার্যত সেই পথেই এগোলেন।
শুধু আক্রমণই নয়, জনতার কাছে মোদীর নামে নালিশও জানালেন সনিয়া-তনয়। বিচার চাইলেন— কেন সংসদে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আক্রমণ করলেন! একই কথা বলে দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিপুল আসন জিতে নিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল।
আধঘণ্টার বক্তৃতায় রাহুল মোদীকে বিদ্ধ করে বলেন, ‘‘বিহারের ভোটে ৩০ বার প্রচারে গিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু ফাঁকা প্রতিশ্রুতিতে মন জয় করতে পারেননি সে রাজ্যের ভোটারদের। অসমেও আসবেন তিনি, অচ্ছে দিনের স্বপ্ন বিলির চেষ্টা করবেন।’’ কিন্তু বিহারের মতোই মোদীকে এখানেও উপযুক্ত জবাব দিতে তিনি অসমবাসীর কাছে আবেদন জানান।
বিধানসভা নির্বাচন হলেও কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এ দিন রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কথাই তোলেননি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু এক বারের জন্যও তাঁর নাম নেননি রাহুল। কংগ্রেস ছেড়ে গেরুয়া-বাহিনীর শিবিরে যোগ দেওয়া হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কথাও টেনে আনেননি। এমনকী, বিদায়ী বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল এআইইউডিএফ বা অগপ-বিজেপি জোট নিয়েও টুঁ শব্দটি করেননি রাহুল। মোদী ছাড়া বিপক্ষের কারও নাম নেওয়া নিয়েও সতর্ক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত-ও। জনসভার মঞ্চে রাহুলের সঙ্গে ছিলেন এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি যোশী, সম্পাদক অবিনাশ পান্ডে ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবন সিংহ ঘাটোয়ার।
এ দিন বিশেষ বিমানে শিলচর পৌঁছন রাহুল। কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে যান শহরের বুকে। পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে তৈরি হয়েছিল হেলিপ্যাড। সেখান থেকে এসপিজি-বেষ্টিত হয়ে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন।
কংগ্রেস অফিসের ছোট্ট, ছিমছাম অনুষ্ঠানের পর রাজীব ভবনে শহরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মিলিত হন রাহুল। গগৈয়ের উন্নয়নের জয়ডঙ্কার মধ্যেই বরাক উপত্যকার রাস্তাঘাট নিয়ে মানুষের উষ্মা শুনতে হয় তাঁকে। আগামী পাঁচ বছরে ওই সব দেখভালের দায়িত্ব পরোক্ষে নিজের কাঁধে তুলে নেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।
এ দিন রাহুল গাঁধীবাগে শহিদ স্মৃতিসৌধে গিয়ে ভাষাশহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান। মুখ্যমন্ত্রী গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দত্ত, সাংসদ সুস্মিতা দেব তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
জনসভায় বক্তৃতা করতে গিয়েও রাহুল ভাষাশহিদদের স্মরণ করেন। বরাকের মানুষের আবেগ উসকে বলেন, ‘‘কলকাতার মিষ্টি-দই আমার খুব পছন্দের। ওখানে গেলে মিষ্টি-দই না খেয়ে বিমানে উঠি না। শিলচরে আজ ওর চেয়েও ভাল মিষ্টি-দই দেখে আমি বিস্মিত।’’
বিজেপি ক্ষমতায় এলে শান্তি উড়ে যাবে, বরাকবাসীকে এ ভাবেই সতর্ক করেন রাহুল। তিনি হরিয়ানার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘ওখানে কয়েক দিন আগেও শান্তি ছিল। বিজেপি জেতার পর এখন কী চলছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’’
সংসদে দু’দিনে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর তরজার লড়াইয়ের কথাও তোলেন রাহুল। তিনি জানান, ‘‘কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। কালো টাকা ফেরানোর বদলে এখন জেটলিকে দিয়ে সাদা করানো হচ্ছে কেন? নাগাচুক্তির শর্ত মুখ্যমন্ত্রী জানলেন না কেন? আপনার আমলে কত কর্মসংস্থান হয়েছে?’’ তাঁর সাফাই, ‘‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সম্মানজনক পদ। তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণের কথা ভাবতেও পারি না।’’
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে গত কাল ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন বলেই রাহুল শিলচরের সভায় অভিযোগ করেন। এর পরই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাকে যত খুশি আক্রমণ করুক, আমাকে নিয়ে যত মজাই করুক, আমি ওই সব প্রশ্নের জবাব চাইবই। প্রধানমন্ত্রী শিলচরে এলে আপনারাও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।’’
রেল বাজেটে অসমের জন্য কিছু নেই, অসমের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা কেটে নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা মোদী-আক্রমণেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন। অন্য দিকে, ব্রডগেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে ইংরাজি, হিন্দি, অসমিয়া থাকলেও বাংলা ছিল না কেন— তিন মাস পর প্রশ্ন তোলেন অঞ্জনবাবু। তিনি গাঁধীবাগ পার্ক ও স্মৃতিসৌধের উন্নয়নে ১ কোটি টাকা দাবি করেন মু্খ্যমন্ত্রীর কাছে। পরে গগৈ তাঁর ভাষণে জানান, ১ কোটি কেন, তিনি পরবর্তী সরকার গড়ে ২ কোটি টাকা দেবেন গাঁধীবাগের জন্য। গত বিধানসভা নির্বাচনে হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের কথা উল্লেখ করে গগৈ ঘোষণা করেন, এ বারও আগের মতো জিতিয়ে দিলে ৩ হাজার কোটি টাকা দেব বরাককে।
সভার পরই জানা যায়, সভা চলাকালীনই ভোটের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। চালু হয়েছে আচরণ বিধিও।