আতঙ্কের রাজত্ব থেকে মুক্তির ডাক রাহুলের

নরেন্দ্র মোদীর ‘আতঙ্কের রাজত্ব’ থেকে মুক্ত হওয়ার নাটকীয় আহ্বান এ বার রাহুল গাঁধীর মুখে। বুধবার কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতির ঘোষণা— সকলকে অবিশ্বাস করে একলা চলেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

কংগ্রেসের ১৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবসে রাহুল গাঁধী। বুধবার। —পিটিআই

নরেন্দ্র মোদীর ‘আতঙ্কের রাজত্ব’ থেকে মুক্ত হওয়ার নাটকীয় আহ্বান এ বার রাহুল গাঁধীর মুখে। বুধবার কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতির ঘোষণা— সকলকে অবিশ্বাস করে একলা চলেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ ভাবে চলে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠা দেশের বুননটিকেই ধ্বংস করে ফেলছেন তিনি। রাহুলের কথায়, মোদীজি যখন ভাঙার কথা বলেন, জোড়ার কথা বলে কংগ্রেস। কংগ্রেস মানে একে অপরে আলোচনা। কংগ্রেস মানে সকলের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করা। কংগ্রেস মানে প্রতিটি মানুষের কথা শোনা। রাহুলের প্রশ্ন, স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের পরে স্বাধীন দেশ গঠনে কংগ্রেসের মতো ভূমিকা আর কোন দল নিতে পেরেছে?

Advertisement

সনিয়া গাঁধীর কৌশলী অনুপস্থিতির কারণে দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের মূল অনুষ্ঠানে রাহুলের জন্য আসর সাজানোই ছিল। নোট বাতিলে মানুষের ভোগান্তি আর নরেন্দ্র মোদীর ‘ব্যক্তিগত দুর্নীতি’কে পুঁজি করে গত ক’দিন ধরে নরেন্দ্র মোদীর উপর লাগাতার চড়াও হয়েছেন রাহুল। বিরোধী দলগুলিকেও একজোট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তার পরেও মোদীর ‘নীরবতা’ বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে রাহুলকে। সেই শক্তিতে ভর করে আরও আত্মবিশ্বাসী রাহুল এ দিন কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে আরও সুচারু আক্রমণে বিঁধলেন মোদী ও তার দল বিজেপিকে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ছুড়ে দিলেন অমোঘ পাঁচ প্রশ্নবাণ। নোট বাতিলের পটভূমিকায় সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরলেন পাঁচটি দাবিও।

নোট বাতিলের দুর্ভোগ কমার লক্ষণ নেই। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এ দিন দাবি করলেন— দেশের সব চেয়ে ধনী ৫০টি পরিবারকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই ‘যজ্ঞ’ শুরু
করেছেন মোদী। আর দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ তার জন্য বলিপ্রদত্ত। এর মধ্যে রয়েছেন গরিব কৃষক, শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী থেকে সকলে। রাহুল বলেন, মোদী ক্ষমতায় আসার পরে দেশ জুড়ে আতঙ্ক ও হিংসাকে ছড়িয়ে দিতে নেমেছে আরএসএস। কংগ্রেস চিরটা কাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছে। সময়ে এসেছে কংগ্রেস কর্মীদের আরও এক বার দেশবাসীর কাছে গিয়ে আরএসএস ও মোদীর সেই আতঙ্ক ও হিংসা প্রচারের মোকাবিলা করার। রাহুলের ঘোষণা, মোদীর আতঙ্কের রাজত্ব থেকে দেশবাসীকে মুক্তির দিশা দেখাতে পারে একমাত্র কংগ্রেসই।

Advertisement

দলের ১৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবসে রাহুলের আজকের লক্ষ্যই ছিল কংগ্রেসের ঐতিহ্যকে মেলে ধরা। আর তারই সূত্র ধরে মোদীর শৈলীর সঙ্গে কংগ্রেসের ফারাকটি তুলে ধরা। আজ ইকবালকে উদ্ধৃত করে রাহুল বলেন, ‘‘সিতারোঁ সে আগে জাহাঁ অউর ভি হ্যায়, অভি ইসক কে ইমতিহান অউর ভি হ্যায়..’’। যার অর্থ— তারাদের পরেও পড়ে রয়েছে আরও এক দুনিয়া, ভালবাসার আরও পরীক্ষা এখনও দেওয়া বাকি।

কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মানুষের দুর্ভোগ আর মোদীর দুর্নীতি নিয়ে নিরন্তর প্রচার হবে। কিন্তু আসল লড়াইটা বিচারধারার। আড়াই বছরে দেশের মানুষ বুঝতে পারছেন, নরেন্দ্র মোদী কোন অভিমুখে দেশকে নিয়ে যেতে চাইছেন। সেটিকেই বদলের সময় এসেছে। বহুত্ববাদের ঐতিহ্যকে টেনে রাহুল এ দিন সেখানেই আঘাত করতে চাইলেন।

বিজেপি নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, মোদীর শৈলীতেই মোদীকে বধ করার কায়দাটি ধীরে ধীরে রপ্ত করছেন রাহুল। আগে বিজেপি প্রশ্নবাণ শানাত, কংগ্রেসকে তার জবাব দিতে হতো। এখন রাহুল প্রশ্ন করেন, বিজেপিকে তার সাফাই দিতে হয়। নরেন্দ্র মোদী আজ তাঁর মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে আসরে নামান রাহুলের জবাব দিতে। বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘এ যাবৎ বেনামি সম্পত্তি ছিল কংগ্রেসের জিম্মায়। কালো টাকা রুখতেও কোনও পদক্ষেপ কংগ্রেস করেনি। উল্টে ভূরি ভূরি দুর্নীতি। জরুরি অবস্থা জারি করে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের ঐতিহ্যও তাদেরই রয়েছে। আর সেই কংগ্রেসই এখন দেশকে ভয় দেখাচ্ছে।’’ কিন্তু বিজেপি জানে, এই সব অভিযোগ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে করা গেলেও, ব্যক্তি রাহুলকে তাতে বেঁধা যাচ্ছে না। আর সনিয়া গাঁধীও তাই সুকৌশলে পর্দার আড়ালে গিয়ে রাহুলের জন্য মঞ্চটি সাজিয়ে দিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement