নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় ইনিংস। লোকসভায় যখন এলেন, উঠে দাঁড়াল গোটা সংসদ।‘মোদী-মোদী’ রব। হাততালি। ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান।
করজোড়ে শাসক থেকে বিরোধী শিবির পর্যন্ত হেঁটে গেলেন। রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ হয়ে রামবিলাস পাসোয়ান, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফারুক আবদুল্লা হয়ে সনিয়া গাঁধী। সৌজন্য বিনিময় করলেন সকলের সঙ্গে। সুদীপের কাছে থেমে পিছনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখিয়ে সহাস্যে বললেন, ‘‘এঁকেও আবার সঙ্গে আনলেন?’’ সৌজন্যের পালা সনিয়া পর্যন্তই থামাতে হল, কারণ, তখনও রাহুল গাঁধী সংসদে নেই।
সাংসদ হিসেবে মোদী শপথ নিলেন। ফের সনিয়ার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়। তাঁর পরে লোকসভার উপনেতা রাজনাথ সিংহের শপথ। সনিয়া-সহ বাকি নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়। শপথ এ বার অমিত শাহের। তিনি কিন্তু সনিয়ার দিকে ফিরেও তাকালেন না। সনিয়াও মুখ তুললেন না। পিছন থেকে রামদাস আটওয়ালে বলে উঠলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী কোথায়?’’ আর এক বিজেপি সাংসদ তির্যক মন্তব্য করলেন, ‘‘স্মৃতি ইরানি (অমেঠীতে) হারিয়ে কোথায় পৌঁছে দিয়েছেন, কে জানে?’’
স্মৃতি যখন শপথ নিলেন, তখন দু’হাতে টেবিল চাপড়ে গর্জন তুলল গোটা বিজেপি শিবির। নেতৃত্বে মোদী-শাহ। দেখা গেল, স্মৃতি শপথবাক্য পাঠ শুরু করে দিয়েছেন, তখনও টেবিল চাপড়ে চলেছেন মোদী। বোঝা গেল, অমেঠীর ‘জায়ান্ট কিলার’-কে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনবার্তা।
ঈষৎ বিরক্ত দেখাচ্ছিল সনিয়াকে। রাহুল ছুটি কাটিয়ে তখনও বাড়িতেই ঢোকেননি। ফিরলেন যখন, তখন দুপুর। মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ সমাপ্ত। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা রাহুলের বাড়িতে হরিয়ানার নেতা কুলদীপ বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। সংসদ থেকে সনিয়া গেলেন রাহুলের বাড়িতে। বিকেল চারটে নাগাদ রাহুলকে সঙ্গে নিয়েই সংসদে ফিরলেন। কারণ, রাজ্যের নামের আদ্যোক্ষর মেনে তত ক্ষণে কেরলের সাংসদদের শপথের সময় হয়ে গিয়েছে। অমেঠীতে হারলেও কেরলের ওয়েনাড থেকে জিতে এসেছেন রাহুল।
আরও পডু়ন: পাক বার্তার পরেই হানা পুলওয়ামায়, সংঘর্ষে নিহত মেজর
সকাল থেকে কংগ্রেসের নেতার আসনটি খালিই ছিল। কারণ, সনিয়া সে পদে কারও নাম ঘোষণা করেননি (আগামিকাল সনিয়ার বাড়িতে সংসদীয় দলের কৌশল রচনার বৈঠকেই নেতা নির্বাচন হতে পারে বলে খবর)। মাঝে-মধ্যে কেরলের কংগ্রেস সাংসদ কে সুরেশ ওই আসনে বসে সনিয়ার সঙ্গে কথা বলছিলেন। রাহুল এসে আগের বারের মতো দ্বিতীয় সারিতেই বসতে চাইছিলেন। সনিয়াই ডেকে প্রথম সারিতে পাশে বসালেন। লোকসভা তখন অনেকটা ফাঁকা। শাসক শিবিরে মোদী-শাহও নেই। বসে শুধু রাজনাথ।
সকালেই সংসদে প্রবেশের মুখে মোদী বলেছিলেন, ‘‘বিরোধীরা ভোটে সংখ্যা যতই পান, গণতন্ত্রে তাঁদের সব শব্দ মূল্যবান। আশা করব, সংখ্যার চিন্তা আর পক্ষ-বিপক্ষের চেয়ে নিরপেক্ষতার ভাবনায় সকলে কাজ করবেন।’’
এটি যে রাহুলদেরই কটাক্ষ, বুঝতে অসুবিধা হয়নি। রাহুল লোকসভায় আসতেই বিজেপি শিবিরে শোরগোল শুরু হল, ‘‘ওই এসেছেন, ওই এসেছেন।’’ কিছু ক্ষণ আগেই অবশ্য টুইট করে রাহুলই জানিয়েছিলেন, ‘‘লাগাতার চার বারের সাংসদ হিসেবে যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ— কেরলের সাংসদ হিসেবে।’’
গত বার অমেঠীর সাংসদ হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন হিন্দিতে। আজ ওয়েনাডের সাংসদ হিসেবে ইংরেজিতে শপথ। কিন্তু শপথ নিয়ে সচিবালয়ের খাতায় সই করতেই ভুলে গেলেন রাহুল। রাজনাথই পিছু ডাকলেন: ‘‘সই করে যান।’’ ফের গুঞ্জন বিজেপিতে, রাহুল তো ‘ঈশ্বরের নামে’ শপথ নিলেন না! ভোট শেষ, ভক্তিও শেষ?