বালাকোটে হানার পরিকল্পনা কি নিজেই আগাম ফাঁস করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? সেই সংক্রান্ত তথ্য আগেভাগে জানিয়েছিলেন একটি বেসরকারি টিভি নেটওয়ার্কের মুখ্য সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে? মঙ্গলবার এই সন্দেহের তিরেই মোদীকে বিঁধলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। অভিযোগ, তেমনটা সত্যিই হয়ে থাকলে, জেনেশুনে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বায়ুসেনার পাইলটদের।
রাহুলের কথায়, ‘‘এ ধরনের গোপন সরকারি তথ্য দেওয়া আইনি অপরাধ। যিনি তা দিয়েছেন এবং পেয়েছেন, দু’জনের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করতে হবে। জেলে যেতে হবে দু’জনকেই। কে তথ্য ফাঁস করেছেন, তার তদন্ত হওয়া জরুরি।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়া দরকার। কিন্তু হবে না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজেই হয়তো তথ্য দিয়েছেন।’’
২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি-হামলার পরে ভারতীয় বায়ুসেনা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জঙ্গি-প্রশিক্ষণ শিবিরে হানা দেয়। টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি (টিআরপি) নির্ধারক সংস্থা বার্ক-এর সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর অভিযোগ ওঠায় তদন্ত চলছে অর্ণবের চ্যানেলের বিরুদ্ধে। সেই সূত্রে বার্ক-এর প্রধান পার্থ দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোট হানার তিন দিন আগেই অর্ণব পার্থকে বায়ুসেনার পাকিস্তানে হানার কথা জানাচ্ছেন! এতে ‘বিগ ম্যান’-এর জনপ্রিয়তা বাড়বে বলেও আলোচনা করছেন!
এ বিষয়ে আজ প্রথম মুখ খুলে রাহুল বলেন, ‘‘পুলওয়ামা হামলার পরে সাংবাদিক বলছেন, এটা তাঁদের জন্য ভাল।’’ তাঁর মতে, এটা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর ভাবনার প্রতিফলন যে, ৪০ জন জওয়ান মারা যাওয়ার ঘটনার ভিত্তিতে ভোটে জিতে যাওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে। তাঁর যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বায়ুসেনা প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছাড়া কারও পক্ষে হানার কথা আগাম জানা সম্ভব নয়। তথ্য ফাঁস হলে, এদেরই কেউ দিয়েছেন।
রাহুলের অভিযোগ, যদি অর্ণব বালাকোট হানার কথা আগেই জেনে থাকেন, তা হলে পাকিস্তানও তা জানতে পারে। সে ক্ষেত্রে বায়ুসেনার পাইলট, যুদ্ধবিমানকে অযথা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অবশ্য এ জন্য মোদী সরকারকেই দুষেছেন। আগেই ইমরানের অভিযোগ ছিল, বায়ুসেনার হানাকে মোদী দেশীয় রাজনীতিতে ফায়দার জন্য কাজে লাগিয়েছেন। এখন তাঁর বক্তব্য, ওই কথোপকথন থেকে স্পষ্ট যে, মোদী সরকার ভোটে জিততে বেপরোয়া সামরিক অ্যাডভেঞ্চার করে। যাতে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে পুরো উপমহাদেশেরই।