রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। — ফাইল ছবি।
বাজছে ঢোল। ক্ষণে ক্ষণে উঠছে রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ স্লোগান। উড়ছে ফুলের পাপড়ি। নয়াদিল্লির ২৪ নম্বর আকবর রোডের পার্টি অফিসে যেন অকাল দীপাবলির আবহ। তার মধ্যেই বোন প্রিয়ঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় সদর দফতরে হাজির হলেন রাহুল গান্ধী। কিছু ক্ষণ আগেই দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে রাহুলের জেলযাত্রা স্থগিত হয়েছে। রায় মেনে ফিরে পাওয়ার কথা সাংসদ পদও। আর এই আবহে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন রাহুল। টুইটে ভারতের ধারণাকে অক্ষত রাখার কথা লিখলেন। যাকে অনেকেই দেশ ‘ইন্ডিয়া’ এবং দেশের মোদী বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ধারণাকে অক্ষত রাখার অঙ্গীকার হিসাবেই দেখছেন।
দুপুর ৩টে ৪৭ মিনিট। টুইট করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ফেভারিট’ রাহুল সাংসদ-পদ ফিরে পাওয়ায় খুশি জানালেন। পাশাপাশি লিখলেন, ‘‘এই জয় ‘ইন্ডিয়া’কে আরও জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করার শক্তি জোগাল।’’ তার পর ঘড়ির কাঁটা এগোল মাত্র ৯ মিনিট। এ বার টুইট করলেন রাহুল নিজে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সেখানেও রাহুলের মুখে সেই ‘ইন্ডিয়া’-রই কথা। লিখলেন, ‘‘যাই হয়ে যাক, আমার কাজ একই রয়ে গেল।’’ তার পর লিখলেন সেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘ইন্ডিয়ার ধারণাকে অক্ষত রাখা।’’ তা হলে কি যে ধরতাই ছিল মমতার টুইটে, তাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন রাহুল? অনেকেই মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাহুল সাংসদ পদ ফিরে পেলে তা হবে বিরোধীদের পক্ষে সহায়ক। আবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রাজনৈতিক ঘটনা পরম্পরা দেখে অনেকেরই ধারণা, এতে আরও পোক্ত হবে ‘ইন্ডিয়া’-এর ভিত। যদিও অনেকে মনে করছেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ নয়, রাহুল আসলে দেশ ‘ইন্ডিয়া’-এর কথাই বলতে চেয়েছেন। কারণ, ইদানীং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-এর কথা বলতে তা বড় হাতের অক্ষরে লেখার চল হয়েছে। কিন্তু দেশের নাম লেখার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের। অন্য পক্ষের যুক্তি, দেশ ভারতের ধারণাকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়েই তো নেমেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। ফলে টুইটে দেশের নাম লিখলেও আখেরে তা নিজেদের জোটকেই আরও দৃঢ় করার বার্তা রাহুলের।
এ তো গেল নেতাদের পারস্পরিক সম্পর্কের নিরিখে জোটের ভবিষ্যতের জল্পনার কথা। কিন্তু রাহুলের রায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশ জুড়ে উৎসবে মেতে ওঠেন কংগ্রেস কর্মীরা। কংগ্রেসের দলীয় দফতর বাজতে শুরু করে ঢোল, নাকাড়া। স্লোগান ওঠে মুহুর্মুহু। জয়ধ্বনি চলে রাহুলের নামে। তেমন পরিস্থিতিতে আকবর রোডের কংগ্রেসের সদর দফতরে হাজির হন রাহুল। সঙ্গে বোন প্রিয়ঙ্কা। মুহূর্তে আনন্দের বাঁধ ভাঙে কর্মী-সমর্থকদের। রাহুল, প্রিয়ঙ্কাকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় জয়ধ্বনি। উড়তে থাকে আবির। ভেসে আসে ফুলের পাপড়ি। সাদা পোলো টি-শার্ট এবং কালো ট্রাউজার পরিহিত রাহুল হাসিমুখে সামাল দেন সমর্থকদের উচ্ছ্বাস।