রাফাল যুদ্ধবিমান। - ফাইল ছবি।
রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য অনেক বেশি দাম চুকোতে হয়েছে মোদী সরকারকে। ভারতীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যে দামে রফা হয়েছিল, রাফাল কিনতে গিয়ে মোদী সরকারকে তার ৫৫.৬ শতাংশ বেশি দাম দিতে হয়েছে। বিমানের হস্তান্তরেও অনেক দেরি হয়েছে। অন্তত ৭/৮ মাস। বরং ওই বিমান কেনার জন্য পূর্বতন ইউপিএ জমানায় ফরাসি সরকার ও ফরাসি বিমান নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে যা কথাবার্তা হয়েছিল, তাতে বিমানের দাম ছিল অনেক কম। তা আরও দ্রুত হস্তান্তরেরও কথা হয়েছিল।
সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ বুধবার একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এ কথা জানিয়েছে। ওই রিপোর্ট বলছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তিন প্রবীণ কর্তা ২০১৬ সালের ১ জুনের সেই নোটে লিখেছিলেন, একটি রাফাল বিমান কিনতে যা দাম পড়ল এ বার, ইউপিএ জমানায় তার চেয়ে অনেক কম দামে ওই বিমান বেচতে চেয়েছিল ফরাসি সংস্থা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’।
ও দিকে বুধবারই কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর রিপোর্টে জানানো হল, ইউপিএ জমানার চেয়ে মোদী জমানার রাফাল চুক্তি অনেক সস্তা! যুদ্ধবিমান পিছু দাম পড়ছে ২.৮ শতাংশ কম।
কারা ওই নোট দিয়েছিলেন?
রাফাল কেনার জন্য ফরাসি সরকার ও ‘দাসো’র সঙ্গে ভারতের তরফে মধ্যস্থতা করেছিল সাত সদস্যের যে প্রতিনিধিদল, তার অন্যতম ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই তিন প্রবীণ আমলা। যুদ্ধবিমান বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাঁদের যথেষ্টই খ্যাতি রয়েছে। তাঁদের এক জন এম পি সিংহ ছিলেন ভারতীয় দলের পরামর্শদাতা। ইন্ডিয়ান কস্ট অ্যাকাউন্টস সার্ভিসের জয়েন্ট সেক্রেটারি স্তরের অফিসার। অন্য দু’জন- মন্ত্রকের ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজার (এয়ার) এ আর সুলে এবং মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি ও অ্যাকুইজিশন ম্যানেজার (এয়ার) রাজীব বর্মা।
আরও পড়ুন- রাফাল চুক্তির আগেই ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন অনিল অম্বানী: রিপোর্ট
আরও পড়ুন- দুর্নীতি বিরোধী শর্তই বাদ দেওয়া হয়েছিল! রাফাল নিয়ে ফের বিপাকে মোদী সরকার
হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও গড়িয়ে গিয়েছিল ৭/৮ মাস
১২৬টি রাফাল বিমানের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ৩৬টি হস্তান্তরের কথা ছিল ‘দাসো’র। তার মধ্যে ১৮টি বিমানের ভারতে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল তাড়াতাড়ি। কিন্তু সেই ১৮টি রাফাল বিমান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভারতের হাতে তুলে দেয়নি ‘দাসো’।
তাঁদের নোটে তার উল্লেখ করেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই তিন প্রবীণ কর্তা। তাঁরা লিখেছিলেন, ‘‘একেবারে প্রথম দফায় (পড়ুন, ইউপিএ জমানা) ১৮টি রাফাল বিমান হস্তান্তরের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল, তার অনেক পরে ওই বিমানগুলির (১৮টি রাফাল) হস্তান্তর হয়েছে। অন্তত ৭/৮ মাস তো বটেই।’’
আট পাতার নোটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তিন আমলা এও লিখেছিলেন, ‘‘ভারতীয় প্রতিনিধিদল (ইন্ডিয়ান নেগোশিয়েশন টিম বা ‘আইএনটি’) যে দামে ওই বিমান কিনতে রাজি হয়েছিল, হস্তান্তরের সময় তার চেয়ে ৫৫.৬ শতাংশ দাম বেশি দিতে হয়েছে ভারতকে।’’
নোট জানাল, সস্তা ও দ্রুত হস্তান্তরের দাবি সঠিক নয়
তদন্তমূলক প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া ওই নোটই প্রমাণ করছে, সস্তায় রাফাল কেনা হয়েছে বলে মোদী সরকার যে দাবি করেছে, তা ঠিক নয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রয়োজনে সেগুলির দ্রুত হস্তান্তর হয়েছে, মোদী সরকারের এই দাবিও বিভ্রান্তিমূলক।
রিপোর্ট বলছে, সেই নোট পাঠানো হয়েছিল বিমানবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ এয়ার স্টাফ (ডিসিএএস)-কে। রাফাল চুক্তির শেষ পর্বে যিনি সাত সদস্যের ভারতীয় মধ্যস্থতাকারী দলের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। নোটে এটাও লেখা হয়েছিল, ভাল ভাবে চুক্তির শর্ত ও হস্তান্তরের আইনি ও প্রযুক্তিগত দিকগুলি খতিয়ে না দেখেই ফরাসি সরকারের পাঠানো ‘লেটার অফ কমফর্ট’-এ সম্মতি জানিয়েছিল মোদী সরকার। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই তিন কর্তা লিখেছিলেন, ‘‘এটা খুবই উদ্বেগজনক।’’
রাফাল বিমানের দাম বেড়ে কী ভাবে ৫৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছল, তাও সবিস্তারে হিসেব দিয়ে জানিয়েছিলেন ওই তিন যুদ্ধবিমান বিশেষজ্ঞ।
কী বলা হল সিএজি রিপোর্টে?
সিএজি রাজীব মেহঋষির রিপোর্টে এ দিন বলা হয়েছে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে অনেক কম দামে রাফাল কেনা সম্ভব হচ্ছে। তাতে প্রতিটি রাফালে ইউপিএ জমানার তুলনায় ২.৮ শতাংশ দাম কম পড়ছে। ভারত সর্বমোট ১৭.০৮ শতাংশ টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছে।