প্রতীকী ছবি।
পাঁচ মাসের নির্যাস একরাশ হতাশা! কোভিড-১৯ হানায় মৃত্যু ঠেকাতে ‘প্লাজমা থেরাপি’ প্রয়োগে সক্রিয় বিভিন্ন রাজ্য। দিল্লি ও মহারাষ্ট্র ইতিমধ্যেই
এই উদ্দেশ্যে প্লাজমা ব্যাঙ্কও গড়ে ফেলেছে। মুমূর্ষু (মডারেটলি ইল) রোগীর চিকিৎসায় ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’ (সিপি) প্রয়োগ শুরু করেছে হরিয়ানার মতো রাজ্যও। কিন্তু মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণা জানিয়ে দিল, এ ক্ষেত্রে ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’ ব্যবহারে সুফল মেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ! ফলে করোনা চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে ফের তৈরি হল প্রশ্ন।
কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’ প্রয়োগে সুফল কতখানি, তা খতিয়ে দেখতে এপ্রিলে গবেষণার কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর। পাঁচ মাস গবেষণার পরে মঙ্গলবার আইসিএমআর ‘মেড আর্কাইভ’-এ (মেডরক্সিভ) প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, করোনা রোগীর মৃত্যু ঠেকানো বা গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীর অসুখের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে ‘কনভালসেন্ট প্লাজমা’ সহায়ক নয়।
দেশের মোট ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত গবেষণার জন্য বেছেছিল আইসিএমআর। সারা দেশে মোট ৪৬৪ জন করোনা আক্রান্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শরিক হয়েছিলেন। ৪৬৪ জনের মধ্যে ২৩৫ জনের দেহে কনভালসেন্ট প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়েছিল। ২২৯ জনের দেহে প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়নি। ট্রায়ালের পরিভাষায় প্লাজমা প্রয়োগ করা রোগীদের ‘ইন্টারভেনশন আর্ম’ এবং প্রয়োগ না-করা রোগীদের ‘কন্ট্রোল আর্ম’ নামে চিহ্নিত করা হয়।
আরও পড়ুন: আইসিএমআর আশা না দিলেও দমছে না বাংলা
গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ইন্টারভেনশন আর্ম এবং কন্ট্রোল আর্মের মধ্যে মৃত্যুর হার যথাক্রমে ১৩.৬ শতাংশ (৩৪ জন) এবং ১৪.৬ শতাংশ (৩১ জন)। অর্থাৎ, দু’টি ক্ষেত্রে মৃত্যুর হারে তেমন কোনও পার্থক্যই মেলেনি। করোনাভাইরাস সংক্রমিত মুমূর্ষুর নিরাময়ে কার্যত ব্যর্থ ‘প্লাজমা থেরাপি’। যদিও আইসিএমআর-এর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যের কিছু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের বিষয়ে অহেতুক জেদাজেদি করেছে।
মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধার ‘মহাত্মা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর ডিরেক্টর এস পি কলান্ত্রি পুরো গবেষণা পর্বের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে, করোনা-জয়ীদের প্লাজমা চিকিৎসায় ব্যবহার করে কোনও ফল মিলছে না। তাই এ ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য আরও সময় ও অর্থ ব্যয় করার কোনও মানে হয় না।’’ তাঁর অভিযোগ, প্লাজমা ব্যাঙ্ক ও প্লাজমা থেরাপির নামে চারিদিকে যে ‘হাইপ’ তৈরি হয়েছে, তা বন্ধ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: অবশেষে ভারতীয় বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত রাফাল যুদ্ধবিমান
ভোপালের স্বাস্থ্য ও জৈবপ্রযুক্তি গবেষক অনন্ত ভান অবশ্য প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত গবেষণা ও পর্যালোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, ‘‘কনভালসেন্ট প্লাজমার প্রয়োগ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলি আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে এ বিষয়ে নানা প্রচারের ফলে অনেকেরই মনে ধারণা হয়েছে, প্লাজমা থেরাপিতে অব্যর্থ ফল মিলবে।’’
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির (আইআইসিবি) সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত গবেষণাও শুরু হয়েছে। রাজ্যের গবেষণায় প্লাজমা প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএইচবিটি) বিভাগ। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনা রোগীর দেহে প্লাজমা থেরাপিও হয়েছে।
আইএইচবিটি’র বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্যও প্লাজমা থেরাপি সংক্রান্ত গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে। বুধবার তিনি আইসিএমআর-এর গবেষণা প্রসঙ্গে জানান, প্রতিটি ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এর নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটি গবেষণার ফল দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘প্লাজমা থেরাপির ক্ষেত্রে কাকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে, কখন দেওয়া হচ্ছে, কী শারীরিক পরিস্থিতিতে দেওয়া হচ্ছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গায় কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থাকে আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হত বলে মনে হয়। তা ছাড়া আইসিএমআরের অধীনে সারা দেশে ৩৯টি গবেষণাকেন্দ্রে হয়েছে। এতগুলি গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে প্লাজমা থেরাপির সাযুজ্য রক্ষা করা মুশকিল। আমাদের ট্রায়ালে এতখানি নেতিবাচক ফল মিলবে বলে মনে হয় না।’’