প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে আগামিকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে, ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের দেশি-বিদেশি নতুন স্ট্রেন— তখন ভোটপ্রচারে কিংবা রাজনৈতিক জনসভায় কেন কোভিড বিধি মানা হবে না, প্রার্থীরা কেন ভোটাদাতাদের করোনা বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
দেশ জুড়ে করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব সব রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। চিঠিতেও হোলি-সহ বিভিন্ন উৎসবের দিনে যেন জমায়েত না-হয়, তার জন্য রাজ্যগুলিকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু চিঠিতে কোথাও ভোটমুখী রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলি যে সমর্থকদের ভিড় জুটিয়ে সভা করছে তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া তো দূরে থাক, সেখানে যাতে উপস্থিত ভিড় করোনাবিধি মেনে চলে সেই ন্যূনতম সতর্কবাণীটুকুও অনুপস্থিত। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
গত অক্টোবরে বিহারে যখন বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল তখন দেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সে সময়েও সংক্রমণ রুখতে ভোট কেন্দ্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি, রাজনৈতিক সভা করার প্রশ্নে কিছু নিয়ম জারি করেছিল কমিশন। সেই নির্দেশ মেনে বিহার নির্বাচনে অন্যবারের তুলনায় অনেক কম সভা-সমাবেশ করেছিল রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু সেই কড়াকড়ি এ বার কার্যত দেখাই যাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে। করোনা প্রশ্নে রাজনৈতিক নেতাদের গা-ছাড়া মনোভাব দেখে হতাশ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এপিডেমিওলজি ও কমিউনিকেবল ডিজ়িজ় শাখার প্রধান সমীরণ পাণ্ডা। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোট চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁরা যদি জনসভা থেকে কোভিডবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখার মতো বার্তা দিতেন তা হলে উপকার হত। নেতারা সেই বার্তা দিলে মানুষ উৎসাহ পেতেন। ইতিবাচক বার্তা পৌঁছতো সর্বস্তরে।’’
বাস্তবে অবশ্য তার কোনও প্রতিফলন নেই। প্রার্থীরা নিজেদের জন্য ভোট চাইলেও, করোনা প্রশ্নে ভোটদাতাদের স্বার্থকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে নির্বাচনের কমিশনের যুক্তি, করোনা রোখার প্রশ্নে বেশ কয়েকবার নিয়ম জারি করা হয়েছে। জানানো হয়েছে রাজ্যগুলিকে। নিয়ম বলছে, ঘরে ঘরে প্রচারের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে সর্বাধিক পাঁচ জন থাকতে পারবেন।আর রোড শো-র ক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে থাকবে সর্বাধিক পাঁচটি গাড়ি। কিন্তু সেই নিয়ম ভাঙার ছবি প্রায় সর্বত্রই। আর জনসভার ক্ষেত্রে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি জমায়েত করতে পারবে না রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই হোন বা মুখ্যমন্ত্রী— বঙ্গে দুই শিবিরের দুই প্রধান নেতার জনসভায় সেই সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার প্রচেষ্টা প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই নিতে দেখা যায়নি জেলা নির্বাচনী আধিকারিক এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদের। নিয়ম ভাঙলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগ হচ্ছে কোথায়!
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ কী ভাবে সামলানো সম্ভব হবে সেই রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় দল রাজ্যেগুলিতে পাঠিয়ে আটকানো যাচ্ছে না সংক্রমণের তরঙ্গ। ঘরোয়া আলোচনায় স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা মেনে নিচ্ছেন, পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির সভায় যে করোনাবিধি মানা হচ্ছে না, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘বিহারের মতো এ ক্ষেত্রেও পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিস্তারিত সতর্কবিধি জারি করা হয়েছে। ভোটপ্রচারে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না— সেই নির্দেশিকা জনসমক্ষে আছে। কোন ক্ষেত্রে কী নিয়ম মেনে চলতে হবে সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।’’ কিন্তু সেই নিয়ম মানছে কে? এতে যে সংক্রমণ উত্তরোত্তর ছড়াচ্ছে?—তার উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব।