গদির লোভেই আন্দোলনে? প্রশ্ন ‘সর্বাদাকে’

১৫০ টাকার মাছ ৩০০ টাকা কেজি, সবজির দামও তিন গুণ। ততক্ষণে জেলাশাসক বিশ্বজিৎ পেগু ঘোষণা করেছেন, কার্ফু শিথিল হওয়ার খবর মিথ্যে। তা আগের মতোই বলবৎ।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সকালে খবর রটে, বেলা ১টা পর্যন্ত শিথিল কার্ফু। মানুষের ঢল আছড়ে পড়ল বাজারে-দোকানে। লম্বা লাইন থেকে ছিটকে বেরোনো হাতগুলো যে কোনও উপায়ে যা হোক আনাজ, মাছ থলেবন্দি করতে মরিয়া।

Advertisement

১৫০ টাকার মাছ ৩০০ টাকা কেজি, সবজির দামও তিন গুণ। ততক্ষণে জেলাশাসক বিশ্বজিৎ পেগু ঘোষণা করেছেন, কার্ফু শিথিল হওয়ার খবর মিথ্যে। তা আগের মতোই বলবৎ। পুলিশ ও সেনার গাড়ি যতক্ষণে বাজারে হানা দিয়ে সকলকে বাড়ি পাঠাচ্ছে, তত ক্ষণে আগামী কয়েকদিনের রসদ চড়া দামে সংগ্রহ করে নিয়েছেন নগরবাসী। গত রাতেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গাড়ি পোড়ানো, গুলি, মৃত্যুর ঘটনার পরে আজ সকাল থেকে থমথমে শহরে অল্প হলেও প্রাণসঞ্চার হল।

দু’দিন পরেই গুয়াহাটিতে আসার কথা ছিল ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর। নবরূপে সেজে উঠেছিল রাস্তাঘাট, ব্রহ্মপুত্রের পাড়, সেতু, দেওয়াল, ডিভাইডারগুলি। দু’দিনের ঝড়ে সব তছনছ। দেওয়ালে দেওয়ালে কালো কালিতে স্লোগান, ভেঙে ফেলা হয়েছে রেলিং, ডিভাইডারে জ্বলেছে আগুন, ওপড়ানো গাছ। নতুন পিচ ঢেকেছে টায়ার, ব্যারিকেড ও গাছ পোড়ানো ছাইয়ে। এই সময়টা গুয়াহাটিতে বিদ্রোহ নয়, আদতে বইমেলার মরসুম। আর অসম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সেই বইমেলার মাঠই এ দিনের জন্য আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: শান্তির ডাক দিল আসু, স্বাভাবিক হচ্ছে অসম

প্রিয় শহরের অবস্থায় দুঃখপ্রকাশ করে শিল্পীসমাজের সমাবেশে হাজির নায়িকা বর্ষারানি বিষয়া বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন কিন্তু অহিংস, আমরা খালি হাতে আসছি। কিন্তু অন্ধকার হলেই কারা শহরের রাস্তায় ধ্বংসলীলা চালান, আগুন লাগান, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আন্দোলন ধ্বংস করতে নোংরা রাজনীতি চলছে। শিল্পী সমাজ ডিভাইডার, দেওয়াল ফের মেরামত করে, সাজিয়ে তুলবে। সারিয়ে দেবে রাস্তা।’’

গত বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে জুবিন গর্গের গাওয়া ‘সকলের আনন্দ সর্বানন্দ’ গেরুয়া দলকে তুমুল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জনপ্রিয় ‘থিম সং’ গেয়েছিলেন সীমান্ত শেখর। দু’জনই বিজেপির সব অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়ে আন্দোলনের পুরোভাগে। হুইলচেয়ারে বসে আন্দোলনে যোগ দেন বর্ষীয়ান নাট্যকর্মী রত্ন ওজা, গায়িকা সুদক্ষিণা শর্মারা। অতীতে বিজেপির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বর্ষারানি এখন অসম বিক্ষোভের অন্যতম মুখ। তিনি বলেন, ‘‘অচ্ছে দিন আর সর্বোচ্চ জিডিপির প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিজেপির আমলে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তলানিতে অর্থনীতি। সর্বাদা ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে জনমতের দাম দিলেন না।’’ এক সময় আসু সভাপতি এবং আইএমডিটি আইনের বিরুদ্ধে লড়ে নায়কের খেতাব পাওয়া মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে ইঙ্গিত করে বর্ষা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এক দিন গদিতে বসার লোভেই কি অসম আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement