বিচারপতি পুষ্পা গনেড়িওয়ালা
পকসো আইন নিয়ে তাঁর রায়ে বিতর্ক হয়েছে দেশ জুড়ে। সেই রায়ে অবশ্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের সেই বিচারপতি পুষ্পা গনেড়িওয়ালাই আবার কোভিড রোগীদের সঙ্গে বৈষম্যকে ‘অস্পৃশ্যতার’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
১৯৬৯ সালে মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার পারাটওয়াড়ায় জন্ম পুষ্পা বীরেন্দ্র গনেড়িওয়ালার। এক সময়ে অমরবাতী জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৭ সালে জেলা জজ পদে নিযুক্ত হন। মুম্বইয়ের সিটি সিভিল কোর্ট ও নাগপুরে জেলা এবং পারিবারিক আদালতে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে নাগপুরের প্রিন্সিপ্যাল জেলা ও দায়রা বিচারক হন। আরও পরে নিযুক্ত হন বম্বে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পদে।
২০১৮ সালে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য পুষ্পা গনেড়িওয়ালার নাম বিবেচিত হয়। কিন্তু এই নিয়োগের বিরোধিতা করে বম্বে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের মত মেনে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৯ সালে ফের তাঁর নাম বিবেচিত হয়। হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন তিনি। ২০২১-এর ২২ জানুয়ারি বম্বে হাইকোর্টের সুপারিশ মেনে তাঁকে স্থায়ী বিচারপতি পদে নিয়োগে সম্মতি দেয়।
২০১৯ সালে বিচারপতি পি এন দেশমুখের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এক রায়ে জানায়, প্যারোলে মুক্তি পাওয়া হল জেলবন্দিদের একটি সীমিত অধিকার। বছরে একাধিক বার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার উপায় ছিল মহারাষ্ট্রের জেল বিধিতে। বিধির সেই অংশ খারিজ করে বেঞ্চ। সেই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন বিচারপতি গনেড়িওয়ালা। ২০১৯ সালে দু’টি খুনের মামলায় শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার নির্দেশ দিয়েছিল যে বেঞ্চ, তারও সদস্য ছিলেন তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নাগপুরে কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালে অপর্যাপ্ত শয্যা ও উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকা সংক্রান্ত মামলার বিচার করে গনেড়িওয়ালার বেঞ্চ। সেই মামলায় বেঞ্চ মহারাষ্ট্র সরকারকে নির্দেশ দেন, অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অক্টোবর মাসে কোভিড পজ়িটিভ হওয়ার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ না পেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এক মহিলা। বিচারপতি গনেড়িওয়ালের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি গড়ে ওই মহিলার চিকিৎসা করতে হবে। সেইসঙ্গে কোভিড রোগীদের সঙ্গে হওয়া বৈষম্যকে দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলা ‘অস্পৃশ্যতা’র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন বিচারপতিরা।
মহারাষ্ট্রের প্রবীণ আইনজীবী মজিদ মেমন আজ ফোনে বলেন, ‘‘আমি বিচারপতি গনেড়িওয়ালার এজলাসে সওয়াল করিনি। তিনি অন্য মামলায় উপযুক্ত রায় দিয়ে থাকতেই পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর রায় নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তা বৈধ। পকসো আইনের সংশ্লিষ্ট অংশ পড়ে দেখলেই বোঝা যাবে, যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে সরাসরি সংস্পর্শ (ডিরেক্ট কন্ট্যাক্ট)-এর কথা নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়নি। তিনি এই ডিরেক্ট কন্ট্যাক্ট-এর ধারণার বশবর্তী হয়েই স্কিন টু স্কিন কন্ট্যাক্ট-এর কথা বলেছেন। এই রায় নজির হয়ে দাঁড়ালে বড় সমস্যা তৈরি হত।’’