চরণজিৎ সিংহ চন্নী। ছবি পিটিআই।
উপনির্বাচনের ফলাফলে ধাক্কা খাওয়ার পরেই দীপাবলির ঠিক মুখে দেশজুড়ে পেট্রল-ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্র। বিরোধীদের দাবি, পেট্রল-ডিজেলের বিপুল মূল্যবৃদ্ধির জন্যই উপনির্বাচনে মানুষ বিজেপিকে ধাক্কা দিয়েছেন। আগামী বছর একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে তাই দেশ জুড়ে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। কেন্দ্র শুল্ক কমানোর পরপরই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিও কর কমিয়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর পথে হেঁটেছে। তা নিয়ে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিকে লাগাতার কটাক্ষ করে চাপ বাড়াচ্ছিল তারা। এ বারে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসেবে কংগ্রেস-শাসিত পঞ্জাব পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর পথে হাঁটল। এবং তা তারা কমাল রেকর্ড হারে।
রবিবার পঞ্জাবের চরণজিৎ সিংহ চন্নীর সরকার ঘোষণা করেছে, রাজ্যজুড়ে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে মূল্যযুক্ত কর বা ভ্যাট কমানো হচ্ছে। যার দৌলতে সে রাজ্যে পেট্রলে লিটারপিছু ১০ টাকা এবং ডিজেল লিটারপিছু পাঁচ টাকা হারে দাম কমানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রবিবার রাত ১২টার পর থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চন্নী তাঁর সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে জানিয়েছেন, এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত যা গত ৭০ বছরে নেওয়া হয়নি। তাঁর দাবি, এর ফলে উত্তর ভারতে সবচেয়ে সস্তায় পেট্রল পাওয়া যাবে পঞ্জাবে। দিল্লির তুলনায় পঞ্জাবে ৯ টাকা কম দামে পেট্রল পাওয়া যাবে। রাজ্য সরকার সূত্রে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে পেট্রল-ডিজেল থেকে রাজ্যের আয় বছরে ১ হাজার কোটি টাকা কম হবে। পঞ্জাব সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সে রাজ্যে পেট্রলের দাম কমে হল লিটারপিছু ৯৬.১৬ টাকা। ডিজেলের নতুন দাম হচ্ছে ৮৪.৮০ টাকা। বর্তমানে রাজধানী দিল্লিতে পেট্রলের দাম লিটারপিছু ১০৬.২০ টাকা এবং ডিজেল লিটারপিছু ৮৯.৮৩ টাকা।
চন্নীর সরকারের এই সিদ্ধান্তের সুফল আগামী বছর বিধানসভা ভোটে মিলবে বলে আশা করছে কংগ্রেস। এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল এবং কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিরক্ত রাজ্যবাসী। সেখানে এই সিদ্ধান্ত রাজ্যবাসীর ক্ষোভ কিছুটা কমাবে বলেই কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা। তা ছাড়া, ডিজেলের দাম কমানোর ফলে কৃষকরা কিছুটা বাড়তি উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিরোধীদেরও উপযুক্ত জবাব দেওয়া গিয়েছে বলে রাজ্য কংগ্রেসের একাধিক নেতার বক্তব্য। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এর আগে বিদ্যুতের ইউনিটপিছু দাম কমিয়ে রাজ্যবাসীর বোঝা কিছুটা লাঘব করেছিল চন্নী সরকার। এ বারে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমিয়ে বড় স্বস্তি দিল তারা। এর হাত ধরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার দল আগামী বছর ভোট বৈতরণী পার করার চেষ্টা করবে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক কমানোর পর থেকেই পঞ্জাবের বিরোধী দল শিরোমণি অকালি দল, বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি পেট্রোপণ্যের উপর রাজ্যের কর কমানোর জন্য সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছিল। এমনকি এ দিনও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে কংগ্রেসের বিক্ষোভকে ‘কুমীরের কান্না’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তার পরেই কংগ্রেস-শাসিত প্রথম রাজ্য হিসেবে পঞ্জাব পেট্রল-ডিজেলের দাম এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়েছে। বিরোধী-শাসিত অন্য রাজ্যগুলি এ বার কী করে, সেটাই দেখার।