নিহত দলিত কিশোরীর পরিবার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের চাপে পড়ে অরবিট অ্যাভিয়েশনের সমস্ত বাস পঞ্জাবের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিংহ বাদল। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ‘‘রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে বাস পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে।’’ বাসগুলির কন্ডাক্টর-সহ অন্য কর্মীদের আপাতত প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার অন্যতম মালিক সুখবীর। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের ছেলেও তিনি।
অরবিট অ্যাভিয়েশনের একটি বাসে চড়েই বৃহস্পতিবার মা আর ভাইয়ের সঙ্গে গুরুদ্বারে যাচ্ছিল বছর চোদ্দোর ওই দলিত কিশোরী। মোগা-কোটকাপুরা এলাকা থেকে জনা বারো দুষ্কৃতী বাসে ওঠে। কিশোরী ও তার মায়ের সঙ্গে অভব্য আচরণ করতে গেলে বাধা দেন মা-মেয়ে। এর পরই চলন্ত বাসের জানলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় কিশোরীকে। রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তার। মা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনায় সুখবীর সিংহ বাদলের নাম জড়ানোয় প্রথম থেকেই বিতর্কের মুখে পঞ্জাব সরকার। শনিবার সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী সুরজিৎ সিংহ রাখরা। শিক্ষামন্ত্রী তথা শিরোমণি অকালি দলের নেতা রাখরা বলেছেন, ‘‘যে কোনও সময়েই আমাদের দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হতে পারে।...যা হয়েছে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু যা ঘটেছে সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা। প্রকৃতির ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটতে পারে না।’’
যদিও মোগার এই ঘটনা নিয়ে তাঁর মন্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন রাখরা। তাঁর দাবি, ঘটনার পরে তিনি মোগায় যাননি। তিনি এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি। তিনি যা বলেছেন তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘‘গত কাল পাটিয়ালায় একটি মেয়েদের কলেজের হস্টেল উদ্বোধনে গিয়েছিলাম। সেখানেই আশপাশে এলাকায় আরও মেয়েদের কলেজ খোলার প্রস্তাব ওঠে। এবং দূর থেকে আসতে গিয়ে ছাত্রীরা যাতে কোনও বিপদের মুখে না পড়ে তার সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানেই আমি বলি, আমরা হাজার চেষ্টা করলেও সব দুর্ঘটনা এড়াতে পারব না।’’ তাঁর বক্তব্য, সংবাদমাধ্যম তাঁকে মোগা নিয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি উত্তর দিতে পারেননি। অথচ পরে তাঁর বক্তব্য মোগার ঘটনার সঙ্গে জুড়ে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
যদিও এই ব্যাখ্যায় চিড়ে ভেজেনি। এই ঘটনার পর পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল এবং বিজেপির জোট সরকারকে একযোগে আক্রমণ করেছে আপ ও কংগ্রেস। নিহত কিশোরীর মা যে হাসপাতালে ভর্তি শনিবার তার বাইরে জমায়েত হন প্রায় দেড়শো জন আপ সমর্থক। মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করায় মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের কড়া সমালোচনা করেছে কংগ্রেসও। মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে পঞ্জাবের কংগ্রেস সভাপতি প্রতাপ সিংহ বাজওয়ার বলেছেন, ‘‘আপনার ছেলে উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিংহ বাদল বা আপনার বউমা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বাদল— কারও সাহস নেই মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করা বা ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেওয়ার। প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক দায়িত্ব। আপনি সেটা দিতে পারেননি।’’
মেয়ের মৃত্যুর ন্যায় বিচার চাইতে গিয়ে তাঁদের খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নিহত কিশোরীর বাবা সুখদেব সিংহ। ‘‘আমি এবং আমার ছেলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। আমাদের সুরক্ষার প্রয়োজন। আমার পরিবারের কোনও সদস্যের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য লিখিত ভাবে নিশ্চয়তা চাই।’’
গত কালই সরকারের ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং নিহত কিশোরীর মায়ের জন্য সরকারি চাকরি ও বিনা খরচে চিকিৎসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে মেয়েটির পরিবার। তাঁদের দাবি, বাস চালানোর অনুমতি বাতিল করা হোক অরবিট অ্যাভিয়েশনের। না হলে মেয়ের দেহ সৎকার করবে না তারা। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে থাকে রাজনৈতিক দলগুলিও। একপ্রকার বাধ্য হয়েই অরবিটের বাসগুলি রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী।