একা মুখ্যমন্ত্রীকে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। রাম রহিমের ডেরার পরেই পঞ্জাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী রাধাস্বামী সৎসঙ্গ বিয়াস। জানুয়ারির শেষে সৎসঙ্গের প্রধান গুরিন্দর সিংহ ধিল্লোঁ তাঁর সমর্থকদের যাঁকে পছন্দ, তাঁকেই ভোট দিতে বলেছিলেন।
প্রতীকী ছবি।
‘ফুল কে সাথ তকড়ী’।
রবিবার পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়ে গেল। শনিবার গভীর রাত থেকেই এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপে সাঙ্কেতিক বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল ‘প্রেমী’-দের মোবাইলে। গুরমিত রাম রহিমের ডেরা সচ্চা সৌদার ‘প্রেমী’ বা অনুগামীরা বার্তা পেয়ে একটু অবাকই হয়েছিলেন। ফুল বা ‘পদ্ম’-র সঙ্গে আবার ‘তকড়ী’ বা দাঁড়িপাল্লাও। অর্থাৎ বিজেপির সঙ্গে অকালি দলেরও প্রতীক চিহ্ন। কিন্তু এ বার যে বিজেপি ও অকালি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। মানে একটাই। যেখানে যে শক্তিশালী, তাকেই ভোট দিতে হবে। কংগ্রেস বা আম আদমি পার্টিকে ভোট দিলে চলবে না।
রবিবার পঞ্জাবে প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম। এ বার নির্বাচনের ঠিক আগে হরিয়ানার বিজেপি সরকারের সুপারিশে খুন-ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাম রহিমকে জেল থেকে একুশ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। তখনই কংগ্রেস, আপ নেতারা প্রমাদ গুণেছিলেন। তাঁরা আঁচ করেছিলেন, বিজেপি এ ভাবে পঞ্জাবে রাম রহিমের প্রায় চল্লিশ লক্ষ ‘প্রেমী’-র ভোট জিততে চাইছে। পঞ্জাবের তিনটি অঞ্চল, মাঝা, মালয়া ও দোয়াবার মধ্যে মালয়াতেই ১১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯টি কেন্দ্র। সেই মালয়াতেই রাম রহিমের ডেরার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ডেরা সচ্চা সৌদার রাজনৈতিক কমিটি সব নির্বাচনের আগেই বৈঠকে বসে ঠিক করে, এ বার অনুগামীদের কাকে ভোট দিতে বলা হবে।
শুধু রাম রহিমের ডেরা নয়। পঞ্জাবের শিখ ধর্ম ও রাজনীতি মিলেমিশে থাকার প্রথা মেনে রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মগুরু, সম্প্রদায়ের আশ্রম বা ডেরার প্রভাবও পঞ্চনদীর রাজনীতিতে যথেষ্ট। রাধাস্বামী সৎসঙ্গ বিয়াস, ডেরা সচখণ্ড বাল্লান, নূরমহল ডেরা, নিরঙ্কারি মিশন, নামধারী সম্প্রদায়ের সমর্থন পেতে তাই সব দলের নেতারাই ডেরায় ভিড় জমান।
রাম রহিমের ডেরা সচ্চা সৌদা বিজেপি, অকালিকে সমর্থন করছে টের পেয়ে আজ পঞ্জাবের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী অভিযোগ তুলেছেন, অকালি, বিজেপির সমঝোতা এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দুই দলই ডেরা সচ্চা সৌদার মদত নিচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মানও নিজের কেন্দ্র ধুরিতে ডেরার সমর্থন চেয়েছেন। শিখ ভোট টানতে চন্নীর অভিযোগ, অকালি-বিজেপি সরকারের আমলেই পঞ্জাবে গুরু গ্রন্থ সাহিবের অবমাননা হয়েছিল।
চন্নী এখন বিজেপি, অকালির বিরুদ্ধে রাম রহিমের ডেরার থেকে মদত নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন ঠিকই। বাস্তবে ভোটের প্রচারে নেমে কংগ্রেসের এই দলিত নেতা নিজেই দলিত রবিদাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাবশালী জালন্ধরের ডেরা সচখণ্ড বাল্লানে গিয়ে রাত কাটিয়ে এসেছেন। ৫০ কোটি টাকা খরচ করে গুরু রবিদাস বাণী অধ্যয়ন কেন্দ্র তৈরিরও ঘোষণা করেছেন। রাম রহিমের পঞ্জাবের মালয়া অঞ্চলে প্রভাব থাকলে সচখণ্ড বাল্লানের প্রভাব দোয়াবা অঞ্চলে।
একা মুখ্যমন্ত্রীকে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। রাম রহিমের ডেরার পরেই পঞ্জাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী রাধাস্বামী সৎসঙ্গ বিয়াস। জানুয়ারির শেষে সৎসঙ্গের প্রধান গুরিন্দর সিংহ ধিল্লোঁ তাঁর সমর্থকদের যাঁকে পছন্দ, তাঁকেই ভোট দিতে বলেছিলেন। গত রবিবার, ভোটের সাত দিন আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুরিন্দরের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তার পরেও সৎসঙ্গ কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থন না জানানোয় চার দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুরিন্দরের ডেরায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
এ বার ডেরা সচ্চা সৌদা একইসঙ্গে বিজেপি, শিরোমণি অকালি দলকে ভোট দিতে বলায় ইঙ্গিত মিলেছে, প্রকাশ্যে জোট না করলেও বিজেপি ও অকালি ফের ভোটের পরে প্রয়োজনে এককাট্টা হওয়ার রাস্তা খোলা রাখছে। অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিংহ বাদলের শ্যালক বিক্রম সিংহ মাঝিথিয়া আজ মন্তব্য করেছেন, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে প্রয়োজনে বিজেপির সঙ্গে জোটের বিষয়ে চিন্তাভাবনা হবে।
আর চন্নীর দাবি, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কংগ্রেসই ক্ষমতায় ফিরছে। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বারাত জিন্নি মর্জি বড্ডি হোবে, পিণ্ড তো ঘট হি হুণ্ডি হ্যায়।’’ অর্থাৎ, গ্রামে আসা বরযাত্রী যতই বিরাট হোক, গ্রামের মানুষের সংখ্যা তার থেকে বেশি হবেই।