কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সভাপতিত্বে এবং সংসদীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের ডাকা বৈঠকে ছিলেন বিরোধীরা। ছবি: পিটিআই।
পুলওয়ামা-কাণ্ড নিয়ে ডাকা আজকের সংসদীয় নেতাদের সর্বদলীয় বৈঠকে সিআরপি কনভয়ে হামলার ‘কড়া প্রত্যুত্তর’ দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করাতে চাইছিল কেন্দ্রীয় সরকার। উপস্থিত কংগ্রেস, তৃণমূল সাংসদদের আপত্তিতে খসড়া থেকে ওই অংশটি শেষ পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়। এসপি, বাম-সহ অন্য বিরোধীরাও আপত্তি তোলেন। রাজনৈতিক সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে।
আজ সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সভাপতিত্বে এবং সংসদীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের ডাকা বৈঠকে বিরোধীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, এনসিপি-র শরদ পওয়ার, এনসি-র ফারুক আবদুল্লা-সহ অন্যান্য দলের সংসদীয় নেতারা। ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারাও। কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও বিজেপি-র কোনও সংসদীয় নেতা না থাকা নিয়ে গোড়াতেই প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। ওই বৈঠকে কেন্দ্রের তৈরি করা প্রস্তাবের খসড়ার যে অংশটি নিয়ে আপত্তি করেন বিরোধীরা, সেটি ছিল একদম শেষে। খসড়ায় পুলওয়ামার ঘটনার তীব্র নিন্দা থেকে শুরু করে আন্তঃসীমান্ত জঙ্গিপনার প্রসঙ্গ পর্যন্ত সহমত পোষণ করেছেন বিরোধী সাংসদেরা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা দেশ যে আজ একসুরে কথা বলছে এবং দেশের পাশে সমস্ত দল রয়েছে— এই বাক্যগুলিতেও সর্বদলীয় সিলমোহর লাগানো হয়। সূত্রের বক্তব্য, একেবারে শেষাংশে সরকারি খসড়াতে যে তিনটি লাইন যোগ করা হয়েছিল, তা হল, ‘আজ আমরা দেশের নিরাপত্তা রক্ষীদের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে জানাতে চাইছি যে, এই চ্যালেঞ্জের উপযুক্ত এবং কঠিন প্রত্যুত্তর দেওয়া হবে।’ জানা গিয়েছে, এই প্রস্তাবের খসড়া কপিটি উপস্থিত নেতাদের মধ্যে বিলি না করে একটি মাত্র কপি আনা হয় এবং সেটি পড়েন বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গৌবা।
প্রস্তাবে আপত্তিটা প্রথম আসে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। বলা হয়, এ ভাবে ফাঁকা চেকে সই করে দেওয়া সম্ভব নয়। তৃণমূলের এক নেতা পরে ঘরোয়া ভাবে জানান, প্রস্তাবে ‘কড়া প্রত্যুত্তর’-এর অংশটি সর্বদলীয় বৈঠকে পাশ করিয়ে নিতে পারলে সরকার যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ করে দাবি করত, সব দল পাশে আছে। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে যুদ্ধের হাওয়া তোলার দায়ভার কেন বিরোধীরা নিতে যাবে? রক্তাক্ত বদলার রাস্তায় হেঁটে যুদ্ধের ডাক দিলে সমস্যার সমাধান হওয়ার পরিবর্তে তা শেষ পর্যন্ত আরও গভীর হবে কিনা, কে বলতে পারে? পাশাপাশি গোটা বিষয়টির রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং পরিণামের দিকটি তো রয়েছেই।’’ কৌশলে রাজ্যগুলিকেও ওই প্রস্তাবে শামিল করার চেষ্টা হচ্ছিল বলে উল্লেখ করেছেন ওই নেতা।
আরও পড়ুন: কতটা ‘স্বাধীনতা’, ধোঁয়াশায় বাহিনী
তৃণমূল এবং কংগ্রেসের বক্তব্য, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে চরম অস্থিরতা তৈরি করার দায় নেওয়া সম্ভব নয় বলেই গলা মেলায় এসপি, বিএসপি, সিপিআই-সহ অন্যরাও। এসপি-র এক নেতা জানান, এই ধরনের প্রস্তাবে সই করে দিলে তার পরবর্তী দায় কে নেবে। এর তো একটা অভ্যন্তরীণ তাৎপর্যও আছে। সরকার পক্ষ প্রথমে বোঝাতে চেষ্টা করে, এটা নেহাতই খসড়া। এতে কাউকে সই করতে হচ্ছে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের সম্মিলিত চাপের মুখে নিমরাজি হয়েই খসড়া থেকে ওই অংশটুকু বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: জম্মুতে নিশানায় কাশ্মীরিরা, জনতার হামলায় আহত ৩৭
সূত্রের বক্তব্য, আজকের বৈঠকে শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত সরাসরি যুদ্ধের পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ শেষ নয়, বরং প্রথম পদক্ষেপ। তবে পাশাপাশি এই মরাঠা নেতা এ কথাও বলেছেন যে, গুলাম নবি আজাদ এবং ফারুক আবদুল্লা কী পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটা সরকারের মন দিয়ে শোনা উচিত। কারণ ওঁরা উপত্যকারই মানুষ।
জানা গিয়েছে, আজ সরকারের আনা ওই খসড়া প্রস্তাবে আগাগোড়া বিজেপি মন্ত্রীদের সমর্থন করে গিয়েছেন বিজেডি-র নেতা পিনাকী মিশ্র। কাশ্মীরের প্রবীণ নেতা ফারুক বৈঠকে বলেন যে, তিনি সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজনাথ সিংহের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বার্তা দিতে চান যে, অনেক হয়েছে। ওই হামলার পরিণামে গোটা দেশের সঙ্গে কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ যেন ব্যাপক আকার না নেয়, সেটা সবার আগে দেখতে হবে। সরকার যদি কিছু সদর্থক পদক্ষেপ করে, তিনি এবং তাঁর দল সঙ্গে রয়েছেন। ফারুকের মতে, সবার আগে কাশ্মীরের ক্ষতে মলম লাগানো প্রয়োজন। উপত্যকার আর এক নেতা কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদের বক্তব্য, ৭০ বছরের ইতিহাসে শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে একক আঘাতে এটাই সব চেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি।
তৃণমূলের তরফে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কাশ্মীরের নাশকতা নিয়ে সংসদীয় নেতাদের বৈঠক ডাকার বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ধাপ মাত্র। তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁর দাবি, সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বা সভাপতিকে নিয়ে দ্রুত বৈঠকে বসা হোক। প্রধানমন্ত্রীকে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্যও আবেদন করেন তৃণমূলের সংসদীয় নেতারা।