আব্দুল রশিদ গাজি ওরফে কামরান। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
পুলওয়ামায় হামলার পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। এখনও পর্যন্ত হামলার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশ। তার মধ্যেই হামলা সংক্রান্ত নয়া তথ্য সামনে এল। তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে তা সামনে এসেছে। তা থেকে জানা গিয়েছে, ভাইপোর মৃত্যুর বদলা নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের চাঁই তথা কুখ্যাত জঙ্গি মৌলানা মাসুদ আজহার। সেই মতো পাকিস্তান থেকে এক জঙ্গিকে উপত্যকায় পাঠিয়েছিল। ২০ বছরের আদিলকে প্রশিক্ষণ দেয় সে। তার নির্দেশেই বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে হামলা চালায় আদিল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ ও ’১৮ সালে পুলওয়ামায় সেনা অভিযানে মৃত্যু হয় মহম্মদ উসমান হায়দর ও তালহা রসিদ নামে দুই জঙ্গির। তারা দু’জনেই ছিল মাসুদ আজহারের ভাইপো এবং জইশ-ই-মহম্মদের সক্রিয় সদস্য। ’৯৯ সালে কন্দহর বিমান ছিনতাইয়ে যুক্ত ছিল মাসুদের বড়দাদা ইব্রাহিম। তার ছেলে উসমান। মাসুদের আর এক ভাই আব্দুল রউফের ছেলে তালহা।
দুই ভাইপোর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জইশ কমান্ডার গাজি আব্দুল রশিদকে উপত্যকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মাসুদ। জইশ-এর কমান্ডার হওয়ার পাশাপাশি আইইডি বিস্ফোরণে হাত পাকিয়েছে রশিদ। দুই সহযোগীর সঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করে রশিদ। হামলার ছক কষতে শুরু করে। সেইসময় ২০ বছরের আদিলের নাগাল পায় সে। নাশকতা চালাতে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। রশিদের পরিকল্পনামাফিকই বৃহস্পতিবার সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় আদিল।
আরও পড়ুন: ‘ওপর মহলের নির্দেশে’ মুক্তির পরদিনই বন্ধ ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর প্রদর্শন
আরও পড়ুন: এ বার রাজৌরিতে আইইডি, বিস্ফোরণে হত সেনা অফিসার
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের হামলার দিন কয়েক আগে পুলওয়ামার রতনীপুরায় জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর। তাতে মৃত্যু হয় এক জঙ্গির। সেনার হাত ফস্কে বেরিয়ে যায় তিনজন। পালিয়ে যাওয়া ওই তিন জঙ্গির মধ্যে একজন ছিল জইশ কমান্ডার রশিদ।
কিন্তু কে এই গাজি আব্দুল রশিদ? সে মাসুদ আজহারের ঘনিষ্ঠই বা হয়ে উঠল কীভাবে? গোয়েন্দাদের দাবি, ৩২ বছরের রশিদ ২০০৮ সালে জইশ-ই-মহম্মদে যোগ দেয়। আফগানিস্তানে তালিবানের কাছে প্রশিক্ষণ নেয় সে। অল্পদিনের মধ্যেই মাসুদ আজহারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ২০১০ সালে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তান থেকে পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরে পাঠানো হয় তাকে। সেখানে হবু জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিত সে। ভারতে বিশেষ করে কাশ্মীর উপত্যকার জইশের যাবতীয় সন্ত্রাসী কাজকর্মের দায়িত্বও তার কাঁধে।
রশিদের নেতৃত্বেই দক্ষিণ কাশ্মীরে জইশ-ই-মহম্মদের নেটওয়ার্ক আরও মজবুত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে উপত্যকার কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মগজধোলাই করে সে। নাশকতামূলক কাজকর্মে যুক্ত করে। এই মুহূর্তে দক্ষিণ কাশ্মীরেই সে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)