পাকিস্তানকে একঘরে করতে কূটনীতির অস্ত্রে জবাব শুরু ভারতের!

পাশাপাশি বিশ্বে পাকিস্তানকে একঘরে করার জন্য সব রকম প্রয়াস শুরু করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৮
Share:

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর গোটা বিশ্বে পাকিস্তানকে একঘরে করার জন্য সব রকম প্রয়াস শুরু করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ছবি: পিটিআই।

সকালে জরুরি ভিত্তিতে ডাকা মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকেই স্থির হয়ে গিয়েছিল, পুলওয়ামা-কাণ্ডের পর কূটনৈতিক অস্ত্রকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো হবে। সেই অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে সাউথ ব্লকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বে পাকিস্তানকে একঘরে করার জন্য সব রকম প্রয়াস শুরু করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।

Advertisement

দেশে যুদ্ধ লাগলে যা ঘটে, প্রায় সেই ধাঁচেই পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে দিল্লি ফেরত আনা হয়েছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাঁকে ইসলামাবাদ ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাক হাইকমিশনারকে চাঁচাছোলা ভাষায় বলা হয়েছে, জইশ-ই-মহম্মদ ও তার মস্তিষ্ক হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে এখনই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সদ্য চিকিৎসা সেরে ফিরে আসা অরুণ জেটলি যাতে নিরাপত্তা কমিটির এই বৈঠকে যোগ দিতে পারেন, সে জন্য তড়িঘড়ি তাঁকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদে ফিরিয়ে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই ভাবে আজ ভোরে সুইডেন থেকে ফিরেই সরাসরি বৈঠকে চলে আসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। স্থির হয়, মূলত তিন ভাবে কূটনৈতিক অস্ত্রকে কাজে লাগানো হবে। এক, পাকিস্তানের উপর থেকে ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন (এমএফএন)’-এর তকমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। দুই, সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানকে বিশ্বে একঘরে করা হবে। সেই অনুযায়ী বিদেশমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয় পি-৫ (ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চিন)-সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে কথা বলে গত কালের নাশকতার ঘটনা সবিস্তার তুলে ধরতে হবে। তিন, ১৯৯৬ সালের সন্ত্রাস-বিরোধী প্রোটোকলটি যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জে গৃহীত হয়, তার জন্য নতুন করে চাপ বাড়ানো হবে। গোটা দিন এই কাজগুলি যন্ত্রের মত করে গিয়েছে সাউথ ব্লক।

Advertisement

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পর্কে এগুলি জানেন?

আরও পড়ুন: ‘বহুত বড়ি গলতি’, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষার হুঁশিয়ারি মোদীর, সেনাবাহিনীকে ‘স্বাধীনতা’

পাকিস্তানকে এমএফএন মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব চিরকালই নগণ্য। গত আর্থিক বছরে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ডলারেরও কম। তবে এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের অঙ্কটা বড় প্রশ্ন ছিল না। পারস্পরিক আস্থা অর্জনে এটি ছিল ভারতের তরফে প্রতীকী পদক্ষেপ। পাক বিদেশে মন্ত্রক আজ বলেছে, ‘‘ভারত আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। বিচার-বিবেচনা করেই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’’ পাকিস্তান কোনও দিনই ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’-এর মর্যাদা দেয়নি ভারতকে।

আরও পড়ুন: উরি-পঠানকোট-ডোকলাম-মায়ানমারের পরে পুলওয়ামা, ফের প্রশ্নের মুখে ডোভাল নীতি

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘বিদেশসচিব পি-৫ রাষ্ট্রগুলির পাশাপাশি ২৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন। কথা হয়েছে জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির সঙ্গেও। সমস্ত রাষ্ট্রপ্রধানই নয়াদিল্লির সঙ্গে সহমত যে, পাকিস্তানের জমিতে বেড়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ এই জঙ্গি হামলার পিছনে রয়েছে। সকলেরই এক কথা, পাকিস্তান তার মাটিতে এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে অর্থ ও অন্য সহায়তা জোগানো বন্ধ করুক।

পাকিস্তান অবশ্য পুলওয়ামা হামলার ন’ঘণ্টারও বেশি পরে, কাল গভীর রাতে যে বিবৃতিটি দিয়েছিল, তাতেই অনড় রয়েছে এখনও। ইসলামাবাদের বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাসবাদী হামলা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু ভারত সরকার এবং প্রচার মাধ্যম যে ভাবে কোনও তদন্ত ছাড়াই গোটা ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে উস্কানি দিচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ এই পাক প্রচার নস্যাৎ করে বিদেশসচিব আজ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে ফের বিশদে জানিয়েছেন, পাকিস্তান কী ভাবে সন্ত্রাসবাদকে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ব্যবহার করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement