National News

‘হিন্দুস্তানকো রোনা চাহিয়ে’! পুলওয়ামা হামলার জঙ্গিদের বার্তা দিয়েছিল মাসুদ আজহার

একাধিক সূত্র যোগ করে গোয়েন্দারা মনে করছেন, হামলার দায়িত্বে এই দুই জঙ্গি থাকলেও লাটাই ছিল জইশ চিফ মাসুদ আজহারের হাতেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৫৭
Share:

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর এলাকা ঘিরে রেখেছেন সেনা জওয়নারা। ছবি: পিটিআই

ভাগ্নে আর ভাইপোর মৃত্যুর ‘বদলা’ নিতেই কি পুলওয়ামায় হামলার ছক কষেছিল জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহার? প্রাথমিক তদন্তে এমনই ইঙ্গিত পেয়েছেন গোয়েন্দারা। মূল চক্রী আজহার হলেও হামলার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল দুই জইশ কমান্ডার গাজি রসিদ এবং কামরান। এই গাজি রসিদ আবার আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। দুই জঙ্গিই পাকিস্তান থেকে ভারতে ঢুকে আদিলের মগজ ধোলাই করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়। পাকিস্তান থেকে বিস্ফোরক ও অন্যান্য সরঞ্জামও পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসেছিল এই দুই কমান্ডারই। আর গাজিকে পাঠানো মাসুদ আজহারের শেষ মেসেজ ছিল, ‘‘বড়া হোনা চাহিয়ে, হিন্দুস্তান রোনা চাহিয়ে।’’

Advertisement

একাধিক সূত্র যোগ করে গোয়েন্দারা মনে করছেন, হামলার দায়িত্বে এই দুই জঙ্গি থাকলেও লাটাই ছিল জইশ চিফ মাসুদ আজহারের হাতেই। কারণ এমন কিছু সাঙ্কেতিক মেসেজের অংশ গোয়ন্দাদের হাতে এসেছে, যা থেকে এটা স্পষ্ট যে হামলার চূড়ান্ত নির্দেশ এসেছিল আজহারের কাছ থেকেই। নির্দেশ এসেছিল, ‘বিরাট হামলা হওয়া চাই, যাতে গোটা ভারত কাঁদবে’। রসিদ গাজিকে এই মেসেজটি পাঠিয়েছিল মাসুদ আজহার। অসুস্থতার জন্য গত প্রায় চার মাস ধরে রাওয়ালপিণ্ডির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মাসুদ আজহার। পুলওয়ামা হামলার ৮ দিন আগেই হাসপাতাল থেকেই ক্ষীণ কণ্ঠে অধস্তন জঙ্গিদের একটি অডিয়ো বার্তা দেয় আজহার। তাতে তাকে বলতে শোনা যায়, এই হামলায় মৃত্যু মিছিলই হবে সবচেয়ে বড় আনন্দ। আর হামলার শেষ লগ্নে আসে ভারতকে কাঁদানোর ওই বার্তা।

পুলওয়ামায় হামলার পিছনে কারা রয়েছে,এত বড় হামলার প্রস্ততি কী ভাবে নেওয়া হয়েছিল— ভারতীয় গোয়েন্দারা এখন মরিয়া হয়ে এই সব তথ্য খুঁজছেন। তাতেই একটি সূত্রে উঠে এসেছে দুই জইশ কম্যান্ডার রসিদ এবং কামরানের নাম। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রশিদ গাজি (২৮) ভারতে ঢুকেছিল কুপওয়াড়া সেক্টর দিয়ে, মাস দু’য়েক আগে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই রশিদ জইশ-এর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সে। তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাক সেনার স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ, যারা মূলত এলওসি বরাবর অভিযান চালায়। সীমান্তের ওপার থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন সেক্টরে গোলাবর্ষণ ও হামলা চালায়। আফগান যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের নর্থ ওয়েস্ট প্রভিন্স থেকে যুদ্ধ চালাত।

Advertisement

আরও পড়ুন: আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২০০ শতাংশ, পাকিস্তান নিয়ে আরও কড়া ভারত

আর কামরান? গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, গত মাসেই পাকিস্তান থেকে জম্মুর পুঞ্চ সেক্টর দিয়ে অন্তত ১৫ জন জইশ জঙ্গি ভারতে ঢুকেছিল। ওই দলের নেতৃত্বে ছিল কামরান। তাকে পাঠানো হয়েছিল পুলওয়ামায় হামলা চালানো আদিল আহমেদ দারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। আইইডি বিস্ফোরক, অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জামও পাকিস্তান থেকে এই কামরানই নিয়ে এসেছিল বলে জানতে পেরেছেন পুলওয়ামা হামলার তদন্তকারী অফিসাররা।

কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একাধিক উদ্দেশ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা এবং সেগুলির যোগ ফলেই এত বড় ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে জইশ-ই-মহম্মদ। জম্মু কাশ্মীরে গত বছরে বেশ কয়েক জন বড় মাপের জইশ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে উপত্যকায়। তাদের মধ্যে অন্যতম তালহা। এই তালহা জইশ চিফ মাসুদ আজহারের বোনের ছেলে, অর্থাৎ ভাগ্নে। অন্য জন ছিল ইব্রাহিম, যে আবার আজহারের ভাইয়ের ছেলে বা ভাইপো। দুই জঙ্গিই কাশ্মীরে পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে মারা যায়। হাসপাতাল থেকে পাঠানো ওই বার্তাতেও ভাগনে ও ভাইপোর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা আজহার বলেছে বলে গোয়েন্দারা একটি রিপোর্ট দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে।

আরও পডু়ন: সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার কড়া প্রত্যুত্তরের প্রস্তাবে আপত্তি উঠল সর্বদলীয় বৈঠকে

কাশ্মীরের যুবকদের একটা অংশের মধ্যে বিপথে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ থেকে জঙ্গি দলে নাম লেখানো নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই সব জঙ্গিরা বিরাট কোনও হামলা চালিয়েছে, এমন ঘটনা এর আগে দেখেনি উপত্যকা। বরং পুলিশ বা নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি। উরি সেনা ছাউনিতে হামলার সময়ও অধিকাংশ জঙ্গিই ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু জম্মু কাশ্মীরের যুবকদের মগজ ধোলাই করে এবং তাদের ব্যবহার করেও যে বিশাল হামলা চালানো সম্ভব, সেটাও প্রমাণ করতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। তাতে আরও যুবককে দলে টানা এবং মগজ ধোলাই করা জঙ্গিদের কাছে অনেক সহজ হত। পুলওয়ামার তদন্ত চালানো গোয়েন্দাদের একটি সূত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

আরও পডু়ন: বদলার দাবিতে ফুটছে দেশ, বদলা চান না বাবলুর স্ত্রী, যুদ্ধ সমাধান নয়, বললেন তিনি

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য এখনই গাজি বা কামরানের প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী আধিকারিক এই দু’জনের নাম নিশ্চিত করেছেন। আপাতত এই দুই ‘ভয়ঙ্কর’ জঙ্গি কোথায় রয়েছে, সেটা নিয়েই সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা গোয়েন্দাদের। তবে তদন্তকারীদের একটি অংশের অনুমান, হামলার আগেই এই দু’জন সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছে।

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement