শাহিন বাগে আন্দোলনকারীরা। ছবি: এপি।
পুলিশের অনুরোধ নয়। কেন্দ্রের মৌখিক আশ্বাসও নয়। একমাত্র দিল্লির তরফে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর কার্যকর না-করার স্পষ্ট, লিখিত আশ্বাস পেলে তবেই প্রতিবাদের রাস্তা ছেড়ে বাড়িমুখো হবে শাহিনবাগ।
নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনগণনা পঞ্জির (এনপিআর) বিরুদ্ধে রাস্তায় নাগাড়ে বসে আন্দোলনের ৩৪ দিন পার। প্রবল ঠান্ডা, পুলিশের আর্জি (অভিযোগ, হুমকিও) আর রাস্তা খালি করার চাপের মুখেও প্রতিবাদ প্রত্যাহারের প্রশ্ন ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন শাহিনবাগের মহিলারা।
অন্যতম উদ্যোক্তা শাহিন কওসরের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রেডিয়োয় এত মন কি বাত বলেন। তিন তালাকের বিলের সময়ে বলতেন, মুসলিম মহিলাদের ভবিষ্যতের চিন্তায় তাঁর ঘুম আসে না। অথচ এখানে যে ২০ দিনের বাচ্চাকে কোলে মা কিংবা জাতীয় পতাকা হাতে ৯০ বছরের বৃদ্ধা দিনরাত ঠান্ডায় বসে, তা কি তাঁর কানে পৌঁছয় না? নিজে না-আসুন, অন্তত উচ্চ স্তরের কোনও প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে এক বার আলোচনায় আপত্তি কোথায়?’’
মহম্মদ ইয়ামিন, ওয়াসিম আলিরা বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন এনআরসি হবে না। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা, তা হবে। আর এক মন্ত্রী বলছেন, এনপিআর-ই এনআরসি-র ভিত। এর পরে আর বিশ্বাস থাকে?’’
আন্দোলনকারীরা দেখালেন, ৩৪ দিনে কার্যত প্রদর্শনীর চেহারা নিয়েছে শাহিনবাগ। লোহার ফ্রেমে ৩৫ ফুট উঁচু যে ভারতের মানচিত্রের সামনে এক থালা ‘মহার্ঘ’ পেঁয়াজ রাখা। ইন্ডিয়া গেটের মডেলের সামনে নিজস্বী তোলার হিড়িকের পাশাপাশি উঠছে ‘আজাদির’ স্লোগান। কোথাও এক ঝাঁক কাগজের নৌকা। জাতীয় পতাকা, ব্যানার আর হরেক স্লোগানে চত্বর ছয়লাপ।
কিন্তু এতে সত্যিই পিছু হটবে সরকার? আন্দোলন চালানো যাবে তো?
শাহিনদের জবাব, ‘‘আমরা অন্তত আলোচনা চাই। তাই তো নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘পোস্টকার্ড’ তৈরি করেছি। নিমন্ত্রণ করেছি চায়ে পে চর্চায়।’’ আর সরকার যদি সে কথা না-শোনে? উত্তর এল, ‘‘শাহিনবাগ স্বাধীন ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগ হতে পিছপা নয়।’’ আন্দোলনকারীরা জানান, জয়নাল আবদিন এবং মেহরুন্নিসা খান নামে যে দু’জন অনশন করছিলেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে।
গেরুয়া শিবির থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, দৈনিক মজুরির বিনিময়ে আন্দোলনে বসছেন শাহিনবাগের কিছু মহিলা। তাকে কটাক্ষ করে এ দিন অভিনেতা সুশান্ত সিংহ এখানে বলে গেলেন, ‘‘জানিয়ে রাখি, এখানে এসেছি এক গ্লাস জল, এক কাপ কফি আর অঢেল
ভালবাসার বিনিময়ে।’’