দাদা ছুটিতে। মায়ের সঙ্গে ভোটের কৌশল স্থির করছেন বোন প্রিয়ঙ্কা।
জন্মদিনেই টুইট করে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী জানান, তিনি ফের বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। তবে এ বারের অবকাশ ‘ছোট’। কিন্তু এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে, অজ্ঞাতবাস থেকে রাহুল ফিরেছেন কি না, তার কোনও হদিস নেই। বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অবশ্য দাবি করেছেন, এক ‘বিশেষ বন্ধু’র সঙ্গে রাহুল এখন লন্ডনে। কিন্তু রাহুলের অনুপস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ভোট কৌশল স্থির করতে রাশ তুলে নিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। আর সেই কৌশল রচনায় প্রিয়ঙ্কাকেও সামিল করছেন তিনি।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গুলাম নবি আজাদ বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন দশ জনপথে। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢরাও। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে পৃথক বৈঠকও হয়েছে আজাদের। উত্তরপ্রদেশের আরও দুই নেতা পি এল পূণিয়া ও প্রমোদ তিওয়ারির সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের কৌশল রচনায়। দলীয় সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রিয়ঙ্কাও গোটা রাজ্যে প্রচার করবেন। এত দিন দাদা ও মায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠী ও রায়বরেলীতেই মূলত তিনি প্রচার করতেন। এ বারে সেই গণ্ডি পেরিয়ে গোটা রাজ্যেই তাঁকে দিয়ে প্রচার করাতে চায় দল। তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা।
আরও পড়ুন
সাংবাদিক বৈঠকেই গ্রেফতার আপ বিধায়ক
এই মুহূর্তে দলের কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন হল, কাকে মুখ করে উত্তরপ্রদেশে এগোনো হবে। কংগ্রেসের প্রচার কৌশলী প্রশান্ত কিশোর প্রথমে রাহুল কিংবা প্রিয়ঙ্কার মধ্যে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে প্রচারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু গাঁধী পরিবারের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাব সটান খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষে যুক্তি ছিল, রাহুল গাঁধী যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার, তাঁকে কোনও অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করা আদৌ যথোচিত হবে না। তার উপর যেখানে এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভিত আদৌ শক্ত নয়। এই পরিস্থিতিতে কোনও ব্রাহ্মণ নেতাকে মুখ করার প্রস্তাব দেন প্রশান্ত কিশোর। সেই সূত্র ধরে সনিয়া গাঁধী সপ্তাহখানেক আগে কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে দশ জনপথে ডেকে এই প্রস্তাব দেন। কিন্তু শীলা দীক্ষিত সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
উমাশঙ্কর দীক্ষিতের পুত্রবধূ শীলা দীক্ষিত কনৌজ থেকে সাংসদ ছিলেন। সে দিক থেকে তাঁকে মুখ করে এগোনোর কথা ভেবেছিলেন সনিয়া। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহলে শীলা দীক্ষিত জানিয়েছেন, এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেসের লড়াই তৃতীয় অবস্থানের জন্য। রাজ্য দখল করা সম্ভব নয় দলের পক্ষে। আর হাতে বেশি সময়ও সেই। ফলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, পরে রাজ্যপাল হওয়ার পর এখন উত্তরপ্রদেশের মুখ হয়ে হারের দায় মাথায় নিয়ে কী লাভ? শীলা ‘না’ করে দেওয়ার পর কংগ্রেস নেতৃত্বকে এখন যেমন এক জন মুখ খুঁজতে হচ্ছে, তেমনই রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্বেও নতুন মুখ আনার কথা ভাবতে হচ্ছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ক্ষত্রীকে সরিয়ে জিতিন প্রসাদের মতো রাহুল ব্রিগেডের কোনও নতুন মুখকে আনার ব্যাপারে চাপ রয়েছে। কিন্তু গুলাম নবি আজাদরা এমন কাউকে চাইছেন, যাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে। আবার সংগঠনের উপর নিয়ন্ত্রণও থাকবে। এই পরিস্থিতিতে প্রমোদ তিওয়ারির মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেই বেশি পছন্দ আজাদের। রাহুল ফেরার আগে যাবতীয় ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখতে চাইছেন সনিয়া ও প্রিয়ঙ্কা। রাহুল ফিরলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দলের এক নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশের কৌশল রচনার বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা থাকছেন মানেই রাহুলের কাঁধ কোনও ভাবেই ছোট হয়ে যাচ্ছে না। প্রিয়ঙ্কা এখনই নির্বাচনে লড়ছেন না। হতে পারে পরের লোকসভায় তিনি অমেঠী ও রায়বরেলীর মধ্যে কোনও এক কেন্দ্রে নির্বাচনে লড়তে পারেন, যদি সনিয়া গাঁধী আর লড়তে রাজি না হন।