কিসান মহাপঞ্চায়েতের মঞ্চে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। বুধবার সহারনপুরে। পিটিআই
মুখে জওহরলাল নেহরুর কথা। হাতে রুদ্রাক্ষের মালা। যেমন থাকত ইন্দিরা গাঁধীর গলায়।
সহারনপুরের কিসান মহাপঞ্চায়েত থেকে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা কার্যত ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন। তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতপাতের ভেদাভেদ মুছে ফেলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকেরা যে ভাবে একজোট হচ্ছেন, তারই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আজ সহারনপুরে পৌঁছন প্রিয়ঙ্কা। প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি ঘোষণা করেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করবে। সহারনপুরের সভায় প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘১৯৫৫ সালে জওহরলাল নেহরু বেআইনি মজুতদারির বিরুদ্ধে আইন এনেছিলেন। বিজেপি সেই আইন বাতিল করে দিয়েছে। এতে কোটিপতিদের লাভ হবে। তাঁরাই কৃষকদের ফসলের দাম ঠিক করবেন।’’ কংগ্রেস জানিয়েছে, রাহুল গাঁধী ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের অজমের থেকে নাগৌর পর্যন্ত চারটি জেলার মধ্যে দিয়ে ট্র্যাক্টর র্যালি করবেন। এর আগে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাহুল পঞ্জাবে ট্র্যাক্টর র্যালি করেছিলেন।
প্রিয়ঙ্কার আজকের মহাপঞ্চায়েত থেকেই উত্তরপ্রদেশের ২৭টি জেলায় ‘জয় জওয়ান, জয় কিসান’ অভিযান শুরু করেছে কংগ্রেস। জাঠ, গুজ্জর, মুসলিম— সমাজের সব অংশের কৃষকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনই এর উদ্দেশ্য। কংগ্রেসের নেতাদের ব্যাখ্যা, ২০১৩-য় মুজফ্ফরনগরে জাঠ-মুসলিম সংঘর্ষের পরে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাত-ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ হয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে ‘মুসলিম-পন্থী’ তকমা দিয়ে বিজেপি প্রচারে নামে। ২০১৭-র বিধানসভার পরে ২০১৯-এর লোকসভাতেও পুরো জাঠ ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছিল। এ বার সেই ভোট ব্যাঙ্কের ভাঙন ধরাতে চাইছে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোক দল। সহারনপুরে আজ ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। দেহরাদূন বিমানবন্দরে নেমে সহারনপুরের পথে প্রিয়ঙ্কার হাতে রুদ্রাক্ষের মালা দেখে বিজেপি নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি ও কৃষকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলেছেন। মৌনি অমাবস্যা উপলক্ষে আগামিকাল প্রয়াগরাজের সঙ্গমে যাবেন প্রিয়ঙ্কা। প্রিয়ঙ্কা আজ সহারনপুরে জম্মু-কাশ্মীরে নিহত সেনা জওয়ান নিশান্ত শর্মার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। কৃষক পরিবারের সন্তানেরাই যে সেনা জওয়ান হয়ে সীমান্তে লড়ছেন, তা তুলে ধরতেই কংগ্রেস ‘জয় জওয়ান, জয় কিসান’ কর্মসূচি নিয়েছে।
আজ আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি বালাকোট অভিযানের বর্ষপূর্তিতে পুলওয়ামায় নিহত সেনা জওয়ানদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হবে। তার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের টোল প্লাজা খালি করে দেওয়া হবে। এর আগে পঞ্জাব-হরিয়ানাতেও জাতীয় সড়কে টোল প্লাজা খালি করে দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে চার ঘণ্টা ‘রেল রোকো’ কর্মসূচি হবে।