গুলি লাগার পরে অভিযুক্ত চন্দন। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
অপরাধ-জনরোষ-গ্রেফতার-এনকাউন্টার।
যোগী আদিত্যনাথের জমানায় ‘বিচারে’র এই ধারা শুরু করেছিল উত্তরপ্রদেশ। পরে সেই পথেই হেঁটেছে বিজেপি-শাসিত অসম, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি। উত্তরপ্রদেশের অমেঠীর একই পরিবারের চার জনকে গুলি করে খুনের ঘটনাতেও মূল অভিযুক্তের সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ সেই পুরনো চেনা ছকেই হাঁটল বলে অভিযোগ উঠে গেল। তবে এ যাত্রায় অভিযুক্ত আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার পায়ে গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আপাতত তার চিকিৎসা চলছে।
বৃহস্পতিবার অমেঠীর এক সরকারি স্কুলের শিক্ষক সুনীল, তাঁর স্ত্রী পুনম, তাঁদের ৬ বছরের কন্যা দৃষ্টি এবং এক বছরের একটি সন্তানকে বাড়ি ঢুকে গুলি করে খুন করা হয়। নিহতদের পরিবারের তরফে করা অভিযোগে বলা হয়, এই খুনে চন্দন বর্মাই মূল অভিযুক্ত। অভিযোগ ওঠে, নিহতরা দলিত এবং অভিযুক্ত উচ্চবর্ণের হওয়ায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। বিষয়টি নিয়ে গণরোষ তৈরি হয়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন বিরোধীরা। এই অবস্থায় চাপের মুখে শুক্রবার নয়ডার একটি টোল প্লাজ়ার সামনে থেকে চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়। সে দিল্লি পালাচ্ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান পুলিশের। তার পরে শনিবারই তার ‘পালানোর চেষ্টা’ এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান জেলা পুলিশের কর্তারা।
ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, গোটা খুনের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। চন্দনের মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, চন্দনের হোয়াটসঅ্যাপের স্টেটাসে লেখা ছিল, ‘পাঁচ জন মরবে, আমি শিগগিরই দেখিয়ে দেব আপনাদের’। তদন্তকারীদের অনুমান, চার জনকে খুনের পরে সে নিজেও আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সে কারণেই পাঁচ জনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিহত স্কুলশিক্ষক সুনীলের স্ত্রী পুনম অগস্টের মাঝামাঝি রায়বরেলী থানায় চন্দনের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও জনজাতি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। তার পর থেকেই তাঁকে পরিবার সমেত খুন করার পরিকল্পনা করেছিল চন্দন। এ দিকে পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, জেরায় চন্দন খুনের কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, তার সঙ্গে পুনমের গত দেড় বছর ধরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরে। তার পরেই পুনম ও তাঁর পরিবারের সকলকে খুনের পরিকল্পনা করে চন্দন। সেই মতো ঘটনার দিন সে সব মিলিয়ে ১০ রাউন্ড গুলি চালায়। তার পরে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। যদিও চন্দনের এই দাবি মানতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে অগস্টে পুনম তার বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও জনজাতি আইনে অভিযোগ কেন করেছিলেন? চন্দনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া
হলে ফের জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।