বিদায়ী: প্রণব মুখোপাধ্যায়। সংসদে। ছবি: পিটিআই।
বিদায় লগ্নে ইন্দিরা গাঁধীর দৃষ্টান্ত তুলে নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা দিয়ে গেলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
আর দু’দিন পর আনুষ্ঠানিক ভাবে অবসর নেবেন প্রণব। তার আগে আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে ছিল সাংসদদের তরফে বিদায় সংবর্ধনা। সেখানে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর আবেগ, উদ্যম, সৌজন্য এবং উষ্ণতার প্রশংসা করার পাশাপাশিই মোদী জমানায় যে ভাবে কোনও আলোচনা ছাড়াই বিল পাশ করানো বা সংসদকে এড়িয়ে অধ্যাদেশ আনা হয়, তারও সমালোচনা করলেন তিনি। পাশাপাশি ইন্দিরা গাঁধীর জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে মোদীকে গণতন্ত্রের বার্তাও দিলেন সুকৌশলে।
রাষ্ট্রপতি জানান, তাঁর ‘মেন্টর’ ছিলেন ইন্দিরা। সত্য বলতে কখনও দ্বিধা করতেন না। জরুরি অবস্থার জেরে কংগ্রেসের হারের পরে লন্ডনে সাংবাদিকেরা ইন্দিরাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘জরুরি অবস্থা থেকে লাভ কী হল?’’ ইন্দিরার জবাব ছিল, ‘‘এই ২১ মাসে ভারতের সব অংশের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পেরেছি।’’ জবাব শুনে প্রথমে নীরবতা, তার পর অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন সকলে। কেউ আর কোনও প্রশ্ন করেননি। এই দৃষ্টান্ত দিয়েই প্রণব এ দিন বলেন, ‘‘তখনই আমি শিখেছিলাম, নিজের ভুল স্বীকার করে তা শুধরে নিতে। অজুহাত দেওয়ার থেকে নিজেকে শুধরে নেওয়া সব সময় ভাল।’’ এ দিন গণতন্ত্র প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহরুর একটি মন্তব্যকেও উদ্ধৃত করেন প্রণব।
আরও পড়ুন: সংসদে শেষ ভাষণে স্মৃতির সরণিতে প্রণব, রাষ্ট্রপতির প্রশংসায় হামিদ-সুমিত্রা
বিদায়বেলায় প্রণবের এই সূক্ষ খোঁচা মোদীর উদ্দেশেই বলে ধারণা বহু সাংসদের। কারণ, এর ঠিক আগেই উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি প্রণবকেই উদ্ধৃত করে বলেছেন ‘অসহিষ্ণু’ ভারতের কথা। ক’দিন আগেও তিনি প্রণবকেই উদ্ধৃত করে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে ঘুরিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেছিলেন।
বিভিন্ন সামাজিক আইন রূপায়ণের জন্য সনিয়া গাঁধীর প্রশংসা করার পাশাপাশি প্রণব এ দিন বাজপেয়ী, আডবাণী, বাম নেতাদের কথাও উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গেই জানান, একমাত্র বাধ্য না হলে আর্থিক বিষয়েও অধ্যাদেশ আনা উচিত নয়। আইন তৈরির জন্য যে ভাবে সময় কমছে, তা ‘দুর্ভাগ্যজনক’। আলোচনা ছাড়াই আইন হচ্ছে। এতে মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদী শুনবেন কি?