মোদী-আবে বৈঠকের প্রস্তুতির ব্যস্ততা তুঙ্গে

জাপান সরকার অসমে পানীয় জল, মেঘালয়ে সড়ক, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, সিকিমে অরণ্য সংরক্ষণ এবং  মিজোরামে সেচ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

আহোম আমল থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই, এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই গুয়াহাটি ও মণিপুরে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অসম ও মণিপুর সরকার। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর গুয়াহাটি ও মণিপুরে তাঁরা বৈঠক করবেন।

Advertisement

জাপান সরকার অসমে পানীয় জল, মেঘালয়ে সড়ক, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, সিকিমে অরণ্য সংরক্ষণ এবং মিজোরামে সেচ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এই অঞ্চলে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জাপান। সে কারণেই ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে বাড়তি জোর দিতে মোদী সরকার বৈঠকের জন্য বেছে নিয়েছে উত্তর-পূর্বকেই।

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে দুই প্রধানমন্ত্রী গুয়াহাটি আসবেন। সঙ্গে আসবে প্রতিনিধি দল। তাঁদের জন্য গুয়াহাটির দুটি পাঁচতারা হোটেল বুক করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সকালে তাঁরা আলোচনায় বসবেন ব্রহ্মপুত্রের বুকে। ৪৫ মিনিটের এই জলবিহারের জন্য আপাতত বেসরকারি হাউসবোট, এম ভি রুদ্রসিংহ-কে বাছা হয়েছে। আহোম রাজা রুদ্র সিংহের শাসনকাল ছিল ১৬৯৬-১৭১৪। তিনি আকবরের মতোই যুদ্ধে নয়, কূটনীতি ও সন্ধির রাজনীতিতে ডিমাসা, জয়ন্তিয়া রাজ্যকে সঙ্গে নেন। দখল করেন কামরূপ। উদারমনা রুদ্র সিংহ বৈষ্ণব ধর্মের উপরে অত্যাচার বন্ধ করে সত্রাধিকারদের ফিরিয়ে আনেন। বিভিন্ন প্রশাসনিক পদের সৃষ্টি করেন তিনি। গান শিখতে দিল্লিতে লোক পাঠান। ব্রাহ্মণ বালকদের সংস্কৃত শিখতে পাঠান গুরুকুলে। দরবারে প্রচলন করেন মুঘল পোশাকের চল। তাঁর আমলেই শিবসাগরে তৈরি হয় বিশাল সরোবর জয়সাগর। গৌরিসাগরে নামদাং পাথরের সেতুও তাঁর কীর্তি।

Advertisement

আরও পড়ুন: মন্দায় বড় ধস রেলের পণ্য বহনে

এমনই এক রাজার নামাঙ্কিত হাউসবোটটিকে আপাতত মাজুলিতে ‘আহোম’ ঐতিহ্য মেনে সাজানো চলছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জলযানটি ৭০ ফুট লম্বা। বিকল্প হিসেবে তৈরি রাখা হচ্ছে এমভি অযোধ্যাকে। পরের বৈঠকের জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে ১৮৫০-এ তৈরি ব্রহ্মপুত্রের পাড়-ঘেঁষা বুড়া সাহেবের বাংলো বা বেন্টিঙ্ক বাংলো নামে পরিচিত এই বাড়িটিতে এক দশক আগে পর্যন্ত কামরূপ মহানগরের জেলাশাসকের আবাস ছিল। বাড়িটিকে এখন ‘ব্রহ্মপুত্র রিভার হেরিটেজ সেন্টার’-এর চেহারা দেওয়া হয়েছে।

১৭ ডিসেম্বর ইম্ফলেও দুই প্রধানমন্ত্রী ইতিহাসের পথেই সফর করবেন। জাপানি সেনাকে সঙ্গে নিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ মণিপুর দখল করেছিল। রেড হিল-এর যুদ্ধে মারা গিয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার জাপ ও আজাদি সেনা। ইম্ফলের অদূরে মৈরাংয়ে নেতাজি উড়িয়েছিলেন তেরঙা ঝান্ডা। সেখানে এখন আজাদ হিন্দ সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে। ইম্ফলের আশপাশের পাহাড়গুলিতে এখনও ছড়ানো বিশ্বযুদ্ধের নানা চিহ্ন। ১৯৪৪ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে রেড হিলে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের তৈরি ইম্ফল শান্তি সংগ্রহশালা ঘুরে দেখার কথা মোদী ও আবের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement