তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন পিকে। ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-বিরোধী জোট গড়া সম্ভব। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করে রাজনীতির হাওয়া ফের গরম করেছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করে তাঁর মন্তব্য, “আমার মনে হয়, তৃণমূল, এনসিপি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস বা যে সব দলের শিকড় কংগ্রেসের মতাদর্শ, রাজনৈতিক অবস্থানে, তারা এক সঙ্গে কাজ করলে বর্তমান কংগ্রেসের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে পারে।”
গোয়া, মেঘালয়ের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের পতাকা উড়িয়েছে তৃণমূল। সম্প্রতি দিল্লিতে এসে মমতা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বের তোয়াক্কা করে না তাঁর দল। গোয়ায় গিয়ে মমতা শুধু কংগ্রেস নয়, গোটা ইউপিএ-কেই ‘অস্তিত্বহীন’ বলে দাবি করেছেন। সংসদেও কংগ্রেস নেতৃত্বের ডাকা কোনও বৈঠকেই যাচ্ছেন না তৃণমূল সাংসদরা।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ভোট পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের এ হেন মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তিনি বলেছেন, “বিরোধী দলগুলি শুধু এককাট্টা হলেই বিজেপির বিরুদ্ধে সাফল্য মিলবে না। তার জন্য চারটি শর্ত দরকার। একটা মুখ, যিনি সবাইকে এককাট্টা করবেন। একটা বিকল্প রাজনৈতিক ভাষ্য। তার পরে ভোটের পাটিগণিত এবং ভোটযন্ত্র।” তাঁর ব্যাখ্যা, “কংগ্রেসের জায়গা নিতে না পারলে কোনও তৃতীয় দল বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে না। যে দেশে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় ১০০ টাকার কম, সেখানে এই ‘লেফট-অব-দ্য-সেন্টার’ মতাদর্শগত জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
রবিবার রাজস্থানের জয়পুরে মোদী জমানায় মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনসভা করবে কংগ্রেস। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী সেই জনসভায় বক্তৃতা করবেন। সনিয়া গাঁধীও যোগ দেবেন কি না, তা রবিবারই স্পষ্ট হবে। তার আগে আজ প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, ‘‘যখন সনিয়া-রাহুল কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিতেন, তখন কংগ্রেস ৩১ থেকে ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সাফল্য পেত। যখন থেকে কে নেতৃত্বে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হল, তখন সাফল্যের হার ১০ শতাংশ বা তার নীচে নেমে গেল।’’ কংগ্রেসে কার্যত নেতৃত্ব বদলের ডাক দিয়ে কিশোরের মন্তব্য, ‘‘যদি নেতা লাগাতার ব্যর্থ হয়, তা হলে কি অন্য কাউকে কাজ করতে দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত নয়? সেই অন্য কেউ কংগ্রেস থেকেই হতে পারে।’’
কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, প্রশান্ত কিশোর আসলে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে পুরো দলের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে চাইছিলেন। সেটা না পেয়ে এখন কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিশানা করা শুরু করেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার বক্তব্য, ‘‘আমরা আগেই বলেছি, যাঁর কোনও মতাদর্শ নেই, দায়বদ্ধতা নেই, এমন এক জন পেশাদার ব্যক্তি কোনও দল বা ব্যক্তির নির্বাচনী কৌশল নিয়ে উপদেশ দিতে পারেন। তিনি রাজনীতির বিষয়বস্তু ঠিক করতে পারেন না।’’ কিশোর জানিয়েছেন, তিনি নিজের ভাবনাচিন্তা গাঁধী পরিবারের সামনে পেশ করেছিলেন। তিনি প্রায় কংগ্রেসে যোগ দিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু পরে দু’পক্ষেরই মনে হয়, এক সঙ্গে হলে লাভের বদলে বিপরীত ফল হবে। তাই বলে তাঁর সঙ্গে গাঁধী পরিবারের কোনও বিবাদ নেই।
পিকে-র মতে, কংগ্রেস যে আদর্শ, রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে, তা দেশের বিরোধী শিবিরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে কংগ্রেস মোটেই ভাল ফল করেনি। গত দশ বছরে লোকসভা, বিধানসভা মিলিয়ে কংগ্রেস ৫টি নির্বাচনে শতকরা নব্বই ভাগ ক্ষেত্রে হেরেছে। ২০১২-য় কর্নাটক, ২০১৭-য় পঞ্জাব, ২০১৮-য় ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ব্যতিক্রম। তাঁর তত্ত্ব, ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে কংগ্রেস প্রতি ১০০টি আসনে মাত্র ৪টি জিতেছে। কংগ্রেসকে বদলাতে হবে, তার কাজের ধরন বদলাতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বদলাতে হবে।
তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন পিকে। বলেছেন, “আমি এখন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা নই। বাংলার নির্বাচনের পরেই বলেছিলাম, আমি এ সব ছেড়ে দেব। গত ছ’মাসে আমি দু’তিন বার আই-প্যাকের অফিসে গিয়েছি। আমার ইচ্ছে হল, একটা রাজনৈতিক জোট তৈরি করা। শাসকের হাতের বাইরে থাকা ৬০ শতাংশ বিরোধী জায়গাটা মজবুত করা।” কিন্তু ঘটনা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়া এবং দিল্লি সফরে সর্বদা উপস্থিত থাকতে দেখা যাচ্ছে পিকে-কে। রাজ্যে পুরভোটের আগেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রীর বাড়ি। তবে পুরভোটে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাঁর বেশির ভাগ সুপারিশই খাটেনি বলে জানা গিয়েছে।