রাঁচীতে ফের এমনই এক মঞ্চে দেখা যাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও সনিয়া গাঁধীকে (ইনসেটে হেমন্ত সোরেন)। —ফাইল চিত্র
কর্নাটকে কুমারস্বামীর মতোই ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের শপথের মঞ্চ কার্যত হয়ে উঠছে বিরোধী জোটের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল, তেজস্বী যাদবের মতো নেতা-নেত্রীদের উপস্থিতিতে ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার রাঁচীতে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন হেমন্ত। রাজ্যের ১১তম মুখ্যমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু।
৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জেএমএম, কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এক জোট হয়ে ভোটে লড়ে বিপুল সাফল্য পেয়েছে। একক বৃহত্তম দল হিসেবে জেএমএম ৩০টি আসন, কংগ্রেস ১৬টি এবং আরজেডির একটি আসন মিলিয়ে জোটের দখলে মোট ৪৭টি আসন। সেই জোটের নেতা হিসেবেই ২৯ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিচ্ছেন শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত।
এই শপথগ্রহণের মঞ্চেই হাজির থাকার কথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। সেই সঙ্গে সনিয়া, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা ছাড়াও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পি চিদম্বরম শপথের মঞ্চে হাজির থাকতে পারেন। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি অনুষ্ঠানে যাবেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও সম্মতি দিয়েছেন বলে হেমন্তের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেরও হাজির থাকার কথা। আরজেডির পক্ষ থেকে লালুপ্রসাদ-পুত্র তথা বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব।
শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য সনিয়া গাঁধীর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে হেমন্ত সোরেন। ছবি: পিটিআই
অর্থাৎ সব মিলিয়ে হেমন্তের শপথগ্রহণ হতে চলেছে বিরোধীদের মেগা শো। রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে বিজেপি। তার অন্যতম কারণ বিরোধীদের ঐক্যের অভাব বলেই মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এই পরিস্থিতিতে হেমন্তের শপথগ্রহণের মঞ্চে বিরোধী জোটের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরার প্রচেষ্টাও নেপথ্যের কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
আবার সামনেই দিল্লি বিধানসভার ভোট। গত লোকসভা ভোটে আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোট হয়নি। কিন্তু বিধানসভা ভোটে জোটের সম্ভাবনা রয়েছে। সে দিক থেকেই কেজরীবালের সঙ্গে সনিয়া-রাহুলের এক মঞ্চে থাকা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অন্য দিকে, সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। এই ইস্যুতে সম্ভবত বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি সরব কংগ্রেস। এই দুই দলের দুই শীর্ষ নেত্রী এক মঞ্চে হাজির হলে রাজনৈতিক দিক থেকে তার গুরুত্ব অনেকটাই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর সব মিলিয়ে সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে কার্যত সব বিরোধী দলগুলির গলায় এক সুর। এতগুলি দলের নেতা-নেত্রীদের একসঙ্গে উপস্থিতি সেই ঐক্যের হাওয়া ধরে রাখার ক্ষেত্রে বার্তা দেবে, মত পর্যবেক্ষকদের।