Pranab Mukherjee

তিনি না-থাকলে পরমাণু চুক্তিই সম্ভব হত না

ভারতীয় রাজনীতি এবং বিদেশনীতিতে ওঁর শূন্যতা পূর্ণ হওয়ার নয়। উনি যে জায়গায় অনেকের থেকেই এগিয়ে ছিলেন, তা হল গভীর ইতিহাসবোধ।

Advertisement

শিবশঙ্কর মেনন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:২২
Share:

প্রণব মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

গোটা জীবনে আমি যত আইসক্রিম খেয়েছি, তার অধিকাংশই বোধহয় ইউপিএ জমানায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ১৩ তালকাটোরা রোডের বাড়িতে! যত রাত হত, উনি ততটাই যেন জেগে উঠতেন। আমি তখন বিদেশসচিব, উনি বিদেশমন্ত্রী। সপ্তাহে অন্তত চার দিন ওঁকে ব্রিফিং করতে যেতাম। উনি সব কাজ সেরে রাতে ডাকতেন। গেলেই প্রথমে জানতে চাইতেন, কিছু খাব কি না। আমার একটু তাড়াতাড়ি নৈশাহার সেরে নেওয়ার অভ্যাস। সেটাও তাঁর অজানা ছিল না। তাই আমি না-বলার পরেই বলতেন, ‘‘তুমি বরং আইসক্রিম খাও! ওটাই এখন তোমার জন্য ভাল হবে!’’

Advertisement

ভারতীয় রাজনীতি এবং বিদেশনীতিতে ওঁর শূন্যতা পূর্ণ হওয়ার নয়। উনি যে জায়গায় অনেকের থেকেই এগিয়ে ছিলেন, তা হল গভীর ইতিহাসবোধ। অভ্যন্তরীণ কোনও রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে, দেশের স্বার্থকে সামনে নিয়ে আসতেন তিনি এবং সেই কাজে ওই ইতিহাসবোধ কাজে লাগাতেন। সংসদে বা বাইরে বিরোধী দলের সঙ্গে বিতর্ক যতই তিক্ত হোক না কেন, তাঁকে সর্বদাই দেখেছি বিষয়টির মূলে গিয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তাকে দেখতে এবং ঘটনার সার্বিক মূল্যায়ন করতে।

প্রণববাবু জানতেন রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের কাজের বৃত্ত আলাদা। প্রশাসনে দুইয়েরই প্রয়োজন রয়েছে। উভয়পক্ষকেই সঙ্গে নিয়ে চলার কৌশলটা তিনি ভাল জানতেন। বিদেশমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে আমি দেশের অন্যতম সেরাদের মধ্যে রাখব, মূলত দু’টি কারণে। এক, তিনি তাঁর মন্ত্রিত্বের কাজে ছিলেন অসম্ভব উৎসাহী ও ক্ষুরধার। দুই, এক জন অগ্রগণ্য রাজনীতিক হিসেবে ভিন্ রাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে তাঁর বাড়তি সুবিধা থাকত। জাতীয় চাহিদা, আবহাওয়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টি ছিল তাঁর নখদর্পণে। ফলে অন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে কী আদায় করতে হবে এবং কতটুকু ছাড় দিতে হবে, সেটা ছিল প্রণববাবুর জানা। আমেরিকার সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায় না-থাকলে সম্ভব ছিল না। যে ভাবে উনি দিনের পর দিন দীর্ঘ দৌত্যের মাধ্যমে এই নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করেছেন, তা আজ ইতিহাস।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘আমার দেখা সেই প্রণবদা’

ওঁকে বিদেশমন্ত্রী হিসেবে প্রথম পাই নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি, তখন আমি বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব। তার পরে ইউপিএ সরকারে উনি যখন বিদেশমন্ত্রী হলেন, আমি বিদেশসচিব। ব্যক্তিগত ভাবে স্নেহ করতেন। মানবিকতার কোনও অভাব দেখিনি কখনও। সবাইকে নিয়ে চলার প্রবণতা ছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধার। বাইরের কোনও কারণ কখনও এই সম্পর্কে ছায়াপাত করতে পারেনি।

(প্রাক্তন বিদেশসচিব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement