সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
সীতারাম ইয়েচুরির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তাঁর প্রয়াণের পরে তাঁর মরদেহ সেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সীতারাম ইয়েচুরিকে নিয়ে এক স্মরণসভায় আজ প্রকাশ কারাট বললেন, ‘‘যখন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া, শিক্ষকরা ওঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন, তখন আমার একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল। একদিকে আনন্দ হচ্ছিল, শ্রদ্ধা জাগছিল যে জেএনইউ-র সেই লড়াকু মনোভাব এখনও রয়েছে। অন্য দিকে আমার মনে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল। কারণ আমি জানি, যে জেএনইউ আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলেছিলাম, তা কী ভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রথম দশকের ছাত্র নেতারা আজ দিল্লি প্রেস ক্লাবে ইয়েচুরির স্মরণসভার আয়োজন করেছিলেন। ইয়েচুরির মৃত্যুর পরে আজ তাঁকে নিয়ে সেখানেই প্রথম স্মৃতিচারণ করেছেন কারাট। তাঁর মতে, ছাত্র রাজনীতি করার সময় সীতারাম ইয়েচুরি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দক্ষতা অর্জতা করেছিলেন, তা কাজে লাগিয়েই তিনি পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতির নেতা হয়ে উঠে গণতন্ত্র, ধর্ননিরপেক্ষতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে লড়াই করেছিলেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পদে ইয়েচুরির পূর্বসূরি প্রকাশ কারাটের মতে, ‘‘সীতারাম সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত এক দশকে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে অবিরাম লড়াই করেছেন। সমস্ত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করে হিন্দুত্ববাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক শাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।’’
সিপিএমের মুখপত্র পিপলস ডেমোক্র্যাসিতেও ইয়েচুরিকে নিয়ে কলম ধরেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘সীতারামের সম্পর্কে অতীত কাল ব্যবহার করে লেখাটাই যন্ত্রণাদায়ক। পাঁচ দশক ধরে আমাদের রাজনৈতিক জীবন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।’’ কারাট মনে করিয়েছেন, সোভিয়েতের পতনের পরে সিপিএম যখন মতাদর্শগত দলিল তৈরি করে, সে সময় ইয়েচুরি তার খসড়া তৈরি করেছিলেন। তখনই পার্টি তাঁকে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। পরবর্তী কালে ২০১২ সালে (পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পরে) যখন দল ফের মতাদর্শগত দলিল তৈরি করে, তখনও ইয়েচুরি সেই দলিল তৈরি করেছিলেন।
কারাট জানিয়েছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন কমে যাওয়ার পরে বিরোধী শিবিরের পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল কী হবে, তা নিয়ে ইয়েচুরি ব্যস্ত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় সিপিএমের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি ধাক্কা খেতে পারে বলেও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় কারাট তাঁকে আশ্বাস দেন, ইয়েচুরি দ্রুত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। কিন্তু তা আর হয়নি।