ধসবিধ্বস্ত ওয়েনাড়। ছবি: রয়টার্স।
হাতে ধরা একগোছা চিঠি। আর সেই চিঠি নিয়েই দিনভর হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পিটি ভেলায়ুধান। কারণ, ঠিকানা খুঁজে পেলেও কার হাতে সেই চিঠি তুলে দেবেন, কে নেবে সেই চিঠি, সেই লোকই খুঁজে পাচ্ছেন না। বুধবার থেকে এ ভাবেই প্রাপকদের কাছে চিঠি পৌঁছে দিতে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোলায়ুধান।
ওয়েনাড়ের মুন্ডাক্কাই পোস্ট অফিসের কর্মী ভেলায়ুধান। গত ৩৩ বছর ধরে মুন্ডাক্কাই, চূড়ালমালা, ভেলারিমালায় বাড়ি বাড়ি চিঠি পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু গত ২ অগস্টের পর থেকে যেন তাঁর কাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোস্ট অফিসে জমা পড়ে ছিল বেশ কিছু চিঠি। তাতে কোনও চিঠিপ্রাপকের ঠিকানা রয়েছে চূড়ালামালা, কোনওটা আবার ভেলারিমালা। বুধবার সেই চিঠি নিয়েই প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দিতে বেরিয়েছিলেন ভেলায়ুধান। কিন্তু কাকে দেবেন? কোথায়ই বা সেই বাড়ি! যে বাড়িগুলিতে এত দিন ধরে চিঠি পৌঁছে দিতেন, গত ২ অগস্টের পর থেকে সেগুলির বেশির ভাগেরই অস্তিত্বই মুছে গিয়েছে ধসে চাপা পড়ে।
বুধবার দুপুরে ভেলারিমালায় গিয়েছিলেন পিওন ভেলায়ুধান। ওই তো ওখানেই ছিল আবদু রহিমানের বাড়ি! হাতে ধরা আবদুরের নামে আসা একটি চিঠি নিয়ে স্থানীয় এক জনকে বললেন পিওন ভেলায়ুধান। কিন্তু আবদুর বাড়িও নেই, তাঁদেরও কোনও খোঁজ নেই। তাই কার হাতে তুলে দেবেন সেই চিঠি, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যান ভেলায়ুধান। শুধু আবদুই নন, এ রকম আরও একগোছা চিঠি হাতে নিয়ে সেই ঠিকানার খোঁজে মুন্ডাক্কাই থেকে চূড়ালমালা হয়ে ভেলারিমালায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। এই তিন গ্রামের বহু পরিবার আবার ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে সেখানে গিয়েও খোঁজার কাজ চালাতে হবে ভেলায়ুধানকে। তাঁর কথায়, “শিবিরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাছে কোনও ফোন নেই। ফলে চিঠিপ্রাপকদের খুঁজে বার করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চিঠি তো দিতেই হবে!”
ভেলায়ুধান নিজেও দুর্যোগের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু বেঁচে গিয়েছেন। চূড়ালমালাতে থাকেন তিনি। ঘরবাড়ি সব গিলে নিয়েছে ধস। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে এখন আত্মীয়ের বাড়ি।