নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের ঠিক আগে সে-দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজারের দিল্লি আসার কথা ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত করার জন্য। চার দিন আগে তাঁর সেই সফর বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেই স্পষ্ট হয়ে যায়, এ বার বাণিজ্য চুক্তি অধরাই থেকে যাচ্ছে। আজ সেই চুক্তির কফিনে শেষ পেরেকটি মারলেন খোদ ট্রাম্প। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তাঁর সফরে কোনও ছোট মাপের বাণিজ্য চুক্তিও হবে না। চুক্তি না-হওয়ার দায় ভারতের কাঁধেই ঠেলে তাঁর মন্তব্য ‘‘মোদীকে আমি খুব পছন্দ করি ঠিকই, কিন্তু ভারতের থেকে (বাণিজ্যের ক্ষেত্রে) ভাল ব্যবহার আমরা পাইনি।’’
গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে শীর্ষ বাণিজ্য প্রতিনিধিদল নিয়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। চেষ্টা ছিল, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই করার। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক জট ছাড়েনি। তার ছ’মাস পরে ট্রাম্পের সফরের মুখে ফের প্রত্যাশার পারদ চড়েছিল। সাউথ ব্লকের বক্তব্য ছিল, পূর্ণাঙ্গ চুক্তি করা সম্ভব না-হলেও বহরে খাটো, নামমাত্র চুক্তি অন্তত হবে। কিন্তু তা-ও শেষ পর্যন্ত ভেস্তেই গেল।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমরা বাণিজ্য চুক্তি করব। কিন্তু সেটা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকছে। (আমেরিকার) ভোটের আগে তা হবে কি না, সেটা অবশ্য আমার জানা নেই।’’ ওয়াশিংটন চেয়েছিল, ভারত যদি জেনারালাইজ়ড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সের (জিএসপি বা বিনা শুল্কে রফতানি) আওতায় থাকা সুবিধা ফেরত পেতে এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী হয়, তা হলে আমন্ড, ওয়ালনাট, আপেল, চিজ়-এর মতো মার্কিন কৃষি ও ডেয়ারি পণ্য আরও বেশি করে কিনুক। গত বছর জিএসপি প্রকল্প থেকে ভারতের নাম বাদ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
দেড় বছর ধরে চিনের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে দিল্লিকেও ক্রমাগত তোপ দেগেছেন ট্রাম্প। ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ থেকে শুরু করে তাকে ‘শুল্কের রাজা’ দেশ তকমাও দিয়েছেন। বলেছেন, ভারতে হার্লে ডেভিডসন বাইকের মতো মার্কিন পণ্যে শুল্ক অত্যন্ত চড়া।
আমেরিকা চায়, মার্কিন কৃষি এবং ডেয়ারি পণ্যের জন্য ভারতের বাজার আরও বেশি করে খুলে দিন মোদী। হৃদ্রোগের চিকিৎসার জন্য মার্কিন স্টেন্টের যে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছেন, তা তুলে নিন। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ার আশঙ্কায় রাজি হচ্ছে না কেন্দ্র। উল্টে তারা চায়, ভারত থেকে রফতানি করা ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম থেকে বাড়তি শুল্ক তুলে নিন ট্রাম্প। ভারতের কৃষি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের জন্য মার্কিন বাজার বেশি করে খুলে দেওয়া হোক।
এই অবস্থায় কেন্দ্রের দাবি, বাণিজ্য চুক্তি না-হওয়ায় শাপে বর হয়েছে। এর ফলে ঘরোয়া রাজনীতিতে বিজেপির লাভই হবে। আমেরিকার শর্ত মেনে এ দেশের বাজার খুললে কৃষক, ঘরোয়া শিল্প সংস্থা ও স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হত।
তবে এ দিনই ২৬০ কোটি ডলার খরচ করে ২৪টি এমএইচ-৬০ মার্কিন হেলিকপ্টার কেনার ব্যাপারে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি। ট্রাম্পের সফরের সময় এ নিয়ে চুক্তি সই হওয়ার কথা।