ব্যাপম কেলেঙ্কারির জেরে আরও কোণঠাসা বিজেপি

মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির জেরে সাংবাদিক মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই জল আরও ঘোলা করে রবিবার সকালে আরও একটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। দক্ষিণ পশ্চিম দিল্লির এক হোটেল থেকে দেহ উদ্ধার হল জব্বলপুর মেডিক্যাল কলেজের ডিন অরুণ শর্মার। পুলিশের সন্দেহ, ইনিও ব্যাপম কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ২২:৪৮
Share:

ভোপালে ব্যাপম কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।

মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির জেরে সাংবাদিক মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই জল আরও ঘোলা করে রবিবার সকালে আরও একটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। দক্ষিণ পশ্চিম দিল্লির এক হোটেল থেকে দেহ উদ্ধার হল জব্বলপুর মেডিক্যাল কলেজের ডিন অরুণ শর্মার। পুলিশের সন্দেহ, ইনিও ব্যাপম কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

Advertisement

এমনিতেই রাহুর দশা চলছে বিজেপি নেতৃত্ব তথা মোদী সরকারের। একের পর এক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছেন কেন্দ্রীয় সরকারের নেতা এবং বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। এমতাবস্থায় ব্যাপম কেলেঙ্কারির জেরে ধারাবাহিক মৃত্যুর ঘটনা সেই চাপকে আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কংগ্রেস আক্রমণে যাওয়ার জন্য খোলা মাঠ পেয়ে যাচ্ছে তা অনুধাবন করে ক্ষত মেরামতির জন্য এ দিন মাঠে নেমেছেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহরা। সুর নরম করেছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও। সাংবাদিক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে জেটলি এ দিন টুইট করে জানিয়েছেন, “যে হেতু এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু বিষয় উঠে এসেছে, তাই খুবই নিরপেক্ষ একটি তদন্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যাতে সমস্ত সন্দেহের অবসান ঘটে।’’ অন্য দিকে শিবরাজের সঙ্গে ফোনে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন রাজনাথ। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি। ব্যাপম কাণ্ডের তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনও রকম সহায়তা করতে চায় বলে জানিয়েছেন রাজনাথ। গত কালের অবস্থান থেকে সরে এসে শিবরাজ সিংহ চৌহানও এ দিন জানিয়েছেন, হাইকোর্ট যদি মনে করে সিবিআই বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থার হাতে ব্যাপম কাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেবে তা হলে তাঁর সরকার আপত্তি করবে না।

এ দিন সকালে দিল্লির ওই হোটেলে অরুণ শর্মার ঘরে কড়া নেড়ে কোনও সাড়া পাননি হোটেলেরই এক কর্মী। পরে তাঁর কাছে থাকা অতিরিক্ত চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই অরুণের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর দেহের পাশে ফাঁকা মদের বোতল ও বমি পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, অরুণবাবু প্রচুর মদপান করেছিলেন। তাঁর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ, অরুণ ব্যাপম কান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুধু অরুণই নন, ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ওই একই মেডিক্যাল কলেজে ডি কে সাকালে নামে আরও এক জন ডিনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। অরুণকেও খুন করা হয়েছে বলে এ দিন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জব্বলপুর জেলা প্রেসিডেন্ট সুধীর তিওয়ারি।

Advertisement

এ দিন নিগমবোধ ঘাটে সাংবাদিক অক্ষয় সিংহের শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন রাহুল গাঁধী এবং অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকারকে কোণঠাসা করার এমন সুযোগ স্বাভাবিক ভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছে না কংগ্রেস। আক্রমণের মুখে পড়ে দৃশ্যতই কিছুটা নড়বড়ে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এ দিন রাজনাথ সিংহ গোটা ঘটনায় শিবরাজের কাছে মধ্যপ্রদেশ সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। কেন্দ্রের বক্তব্য, একের পর বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর কারণে মুখ পুড়ছে নয়াদিল্লিতে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের। প্রবল চাপের মুখে এ দিন একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে শিবরাজ জানিয়েছেন, হাইকোর্ট যদি মনে করে সিবিআই বা অন্য কোনও তগন্তকারী সংস্থার হাতে ব্যাপম কাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেবে তা হলে তাঁর সরকার আপত্তি করবে না। অথচ গত কালই সাংবাদিকের মৃত্যুর পর মধ্যপ্রদেশ সরকারকে আক্রমণ করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু তখন শিবরাজ সাফ জানিয়ে গিয়েছিলেন কোনও অবস্থাতেই এই কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তাঁর যুক্তি ছিল, এই দুর্নীতির তদন্ত হাইকোর্টের নজরদারিতে টাস্ক ফোর্স করছে।

তবে চাপের মুখে শিবরাজ কিছুটা গুটিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও পর্যন্ত অনড় অবস্থান নিয়েই চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রের খবর, বিরোধী বা সংবাদমাধ্যমের দাবি মেনে মন্ত্রিসভায় কোনও বড় রকমের রদবদল করতে চাইছেন না মোদী। অথচ দু’সপ্তাহ পরে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হতে চলেছে। বিরোধী ঝড়ে তাই গোটা অধিবেশনই বানচাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোই বিজেপি-র অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ছে। কেননা বিরোধীরা এককাট্টা হলে থমকে যেতে পারে মোদীর সংস্কারের চাকা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ব্যাপম কাণ্ড বিতর্কের আগুনে সাম্প্রতিকতম সংযোজন মাত্র। ললিত মোদী বিতর্কের আগুন এখনও নেভেনি। তার জেরে তোপের মুখে পড়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। কিন্তু ললিত মোদীকে বাদ দিলেও সম্প্রতি একের পর পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে যা সামগ্রিকভাবে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবমূর্তির উপরে কালির দাগ ফেলে দিচ্ছে। ৩৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের উপর। তাঁর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস। অন্য দিকে পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রধান পদে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দলীয় সাংসদ হেমা মালিনীর গাড়ির ধাক্কায় শিশুমৃত্যু নিয়েও দেশ জুড়ে প্রতিক্রিয়া প্রবল। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর ‘বিমান-কাণ্ডের’ পর বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের ‘ভিআইপি-তন্ত্র’ প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে। মহারাষ্ট্রেরই আর এক মন্ত্রী পঙ্কজা মুন্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তিনি দরপত্র ছাড়াই রাজ্যের স্কুলগুলির জন্য ২৪টি সংস্থাকে একই দিনে ২০৬ কোটি টাকার জিনিস কেনার বরাত দিয়েছেন।

বিজেপি-র এক নেতা জানাচ্ছেন, মোদী সরকারের সংস্কারের পদক্ষেপ আটকাতেই রাজ্যের বিষয়গুলিকে রাজধানীতে নিয়ে আসছেন বিরোধীরা। সব মিলিয়ে মোদী যে ‘জাঁতাকলে’ পড়েছেন সে কথা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছে বিজেপি-র একটি বড় অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement